
পড়াশোনার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোঃ মাঈনুল ইসলাম।
প্রতিমাসে ভার্মী কম্পোস্ট সার ও কেঁচো বিক্রি করে আয় করেন গড়ে ৪০ হাজার টাকা। তার সার ও কেঁচো নিজ এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ক্রয় করে নিয়ে যায়।
মাঈনুলের ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো উৎপাদন খামারে দেখা যায় দোচালা টিনের সেমি পাকা ঘরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় পাকা বেশ কিছু হাউস তৈরি করা হয়েছে। আলো বাতাস যুক্ত ঘরের হাউস গুলোতে গোবর, কচুরিপানা, কলা গাছসহ পচনশীল বিভিন্ন উপাদান ও কেঁচো দিয়ে তৈরি করা হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার।
দুমকি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে থাইল্যান্ড থেকে “এসিনো ফটিডা” বা লাল কেঁচো আমদানি করে ২০২০ সালে মাইনুলের আগ্রহের কারণে তাঁকে মাত্র ১কেজি দেয়া হয়। দুমকি উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম খানের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় তখন থেকেই মাঈনুলের যাত্রা শুরু। তার ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো উৎপাদন কেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশি বিদেশি জৌবসার উৎপাদন কারী সংস্থা পরিদর্শন করতে আসেন। বর্তমানে মাইনুলের ভার্মি কম্পোস্ট ও কেঁচো উৎপাদন খামার থেকে প্রতি মাসে এক টনের বেশি জৌব সার ও চাহিদা অনুযায়ী এসিনো ফটিডা বা লাল কেঁচো বিক্রি করছেন।
মাঈনুল ইসলাম সংবাদ’কে বলেন, সংসারের অভাব অনটনের কারণে পড়াশোনার ফাঁকে বাবাকে কৃষি কাজে সাহায্য করতে গিয়ে এক সময় কৃষি কাজে ঝুঁকে পড়ি। নিজের অনাবাদি পতিত জমিতে মাদা তৈরি করে বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী শাকসবজি ও ফসল চাষ করায় সময় জৌব সার প্রয়োগের প্রয়োজন মনে করি। তখন থেকেই প্রথমে কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় নিজ বাড়িতে “কমিউনিটি বেইজড ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো উৎপাদন কেন্দ্র” গড়ে তুলি। বর্তমানে প্রতি মাসে এক টনের বেশি ভার্মি কম্পোস্ট সার বিক্রি করছি যার বাজার মূল্য ২২থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি থাইল্যান্ড জাতের এসিনো ফটিডা বা লাল কেঁচো সাড়ে ৩থেকে ৪হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে আমি পটুয়াখালী সরকারি কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পড়াশোনা করছি।
এলাকার কৃষক বাবুল হাওলাদার ও কালাম মৃধা জানান, মাইনুলের ভার্মি কম্পোস্ট সার ক্রয় করে জমিতে প্রয়োগ করে অধিক ফলন পাওয়ায় অনেকেই এখন এই সার উৎপাদনে ঝুঁকছেন।
সরেজমিনে দেখা গেল, পটুয়াখালী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তার এলাকার কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরনের জন্য মাইনুলের খামার থেকে কেঁচো ক্রয় করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমরা এখান থেকে প্রতি বছর ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো ক্রয় করি। আজকে এখানে থেকে প্রতি হাজার ১২’শ টাকা দরে ১০হাজার পিচ কেঁচো ক্রয় করেছি এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরো ৫হাজার পিচ কেঁচো নেয়া হবে।
এব্যাপারে দুমকি উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম খান জানান, মাইনুলের ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো ইতিমধ্যে দুমকি উপজেলা কৃষি অফিস সহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্রয় করে নেন।