কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘ভেলা ভাসানি’ উৎসব।খাল,বিল,পুকুর কিংবা বাড়ীর পাশে অন্যকোনো জলাশয় এবং ব্রম্মপুত্র নদের জলের উপর দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল মিটি মিটি আলোর ঝটকা অন্যদিকে আকাশের পানে তাকালে লাখোকুটি তারাকারাজির জ্যোতিময় অবস্থান চতুষ্পার্শ্ব শুনশান তবে থেমে থেমে শুনা যাচ্ছিল ঝিঁঝি পোকার ডাক সব মিলিয়ে কোমলন্তর পরিবেশ।রাত যখন গভীর, বাতাসে ভেসে আসছিল বাদ্য যন্ত্রের সাথে ফকিরি কিংবা তথ্য গান।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত দুপুরে এমন রঙ্গময় ভেলা ভাসানি অনুষ্ঠান উৎযাপিত হলো।
জানতে পারি,গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ‘ভেলা ভাসানি’ অনুষ্ঠান ও মেলা একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। আগে এ উপজেলায় বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মেলা বসত। যেমন হিন্দুদের মধ্যে রথের মেলা, গলুইয়া ইত্যাদি এবং মুসলমানদের মধ্যে মহররমের মেলা, খোদায়ী শিন্নির মেলা ইত্যাদি। এখনো এসব মেলা একেবারে হয় না তা নয়। তবে আগের চেয়ে অনেক কম।বেশ কয়েক বছর ধরে উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ভেলা ভাসানি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
সিদলা ইউনিয়নের সাহেবের চর একটি গ্রাম। এখানে ভাদ্র মাসের জের বিসুতে অর্থাৎ ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ভেলা ভাসানো হয়।
আরো জানা যায়,মুসলমানদের মধ্যে ‘ভেলা ভাসানি’ অনুষ্ঠান শুরু হয় মিলাদ পাঠের মাধ্যমে। ভেলা নির্মাণ করা হয় সাতটি কলা গাছের টুকরা দিয়ে। তার উপর বাঁশ, বাঁশের চটা ও কাগজ দিয়ে নির্মাণ করা হয় একটি ঘর। ঘরের ভেতর প্রথমত একটি মোম জ্বালানো হয়। সঙ্গে আগরবাতিও। পরে ফল-ফলাদি, শিন্নি ইত্যাদি সমর্পণ করা হয়।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্যই বিভিন্ন মানত করে। কেউ মুরগি বা মোরগ, কেউ শিন্নি, কেউ ফল-ফলাদি, আবার কেউবা টাকা-পয়সা। যে যাই নিয়ে আসে, তার কিছু অংশ ভেলায় সমর্পণ করে। বাকি সব ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সারিন্দা ও ঢোলকসহ আধ্যাত্মিক গানের আসর বসানো হয়।
প্রতি বছর ভেলা ভাসান গোলাপ শাক ফকির তিনি বললেন-‘ভেলা ভাসানো হয় হজরত খিজিরের (আ.) উদ্দেশে। তিনি জিন্দাপীর। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। তিনি পানির দায়িত্বে নিয়োজিত। পানির আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার জন্য এ ভেলা ভাসানো হয়। তিনি আরো বলেন কেউ কেউ মানত হিসেবেও ভেলা ভাসিয়ে থাকেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবছর গান বাজনার আসর বসাইনি।