
কিছুটা ভয়, আবার কিছুটা উৎকন্ঠার মধ্য দিয়েই এবছর সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইলের নাগরপুরেও শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদার মানসিকতায় কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে শারদীয়া দুর্গা উৎসব।
পূজা শুরুর পর থেকে প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সাথে সাথে উৎসাহ উদ্দীপনায় কমতি ছিল না নাগরপুর উপজেলার পূজা মন্ডপ গুলোতে। রীতি অনুযায়ী পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার শেষ দিন দশমী। সেই দশমীতে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিমা বিসর্জন। রবিবার (১৩অক্টোবর) সারা দেশের ন্যায় নাগরপুর সরকারি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা।
শাস্ত্রীয় মতে ষষ্ঠীর বোধন পূজার মধ্য দিয়ে দশভূজা ত্রিনয়নী দেবী দুর্গা এবছর দোলায় চড়ে (পালকি) স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোক আসেন। পৃথিবীর সকল অন্যায় অবিচার ও দুঃখ, দুর্দশা ও গ্লানি মুছে বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে ঘোটকে চড়ে (ঘোড়ায়) সন্তানদের নিয়ে মর্তলোকে ফিরে যাবেন। সপ্তমী তিথিতে মাটির মুর্তিতে দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় এবং দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবীকে মর্ত্য লোক থেকে বিদায় জানান ভক্তরা এমটাই বিশ্বাস করে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পূজা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এদিকে, মহাষ্টমী ও মহানবমীতে নাগরপুর উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপে ভক্ত দর্শণার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা চষে বেড়িয়েছেন এ মন্ডপ থেকে ওই মন্ডপ। প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন পাড়া মহল্লার পূজা মন্ডপগুলোতেও রাজনৈতিক নেতাদের পদচারণা ছিল। তবে এবছর বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর পক্ষ থেকেও রাজনৈতিক নেতারা মন্ডপ পরিদর্শন করেন।
নাগরপুর উপজেলার পূজা উদযাপন পরিচালনা কমিটির সভাপতি শিব শংকর সূত্রধর শুরুতে সকলকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এবছর উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপে অত্যান্ত শান্তিপূর্ণ ভাবে উদযাপিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। প্রশাসনের পাশাপাশি যাদের প্রচেষ্টায় এ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাদের প্রতি আমি পূজা উদযাপন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দীপ ভৌমিক,নাগরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) মো. রফিকুল ইসলাম, নাগরপুর উপজেলায় দায়িত্বরত বিএ- ৮৮৭৭ মেজর শাহীন কবির শুভ, পূজা উদযাপন পরিচালানা কমিটির সভাপতি শিব শংকর সূত্রধর, সাধারণ সম্পাদক প্রভাস চক্রবর্তী, নাগরপুর উপজেলা বি এন পির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ছালাম, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন হতে আগত পূজা উদযাপন পরিচালনা ও বিভিন্ন মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বৃন্দ।
এবছর নাগরপুর উপজেলায় ১২৬টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।