
ওয়ানডেতে মানানসই হলেও বাংলাদেশের টি২০ ও টেস্ট খেলার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। এই দুই ফরম্যাটে মাঝেমধ্যে সাফল্য আসলেও সেটা কখনো থিতু হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ের আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছেন না বাংলার ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে টি২০ তে ব্যাটারদের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। অনেকের মতে, স্বল্পঘরানার এই ফরম্যাটে স্বয়ং বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তই খেলার যোগ্যতা রাখেন না! এমন বলছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র সাংবাদিক থেকে শুরু সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা।
সদ্যই স্বাগতিক ভারতের কাছে টি২০ সিরিজের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা আরও বেশি হচ্ছে। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে একেবারেই পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ব্যর্থতার সব সংজ্ঞা ছাড়িয়ে যান শান্ত, তাসকিনরা। হায়দরাবাদের বাংলাদেশের বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে রেকর্ডের মালা গেঁথেছে টিম ইন্ডিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে টি২০ ক্রিকেট সব ব্যাকারণের ঊর্ধ্বে চলে গেছে! এখানে ভালো করতে হলে নিয়মতান্ত্রিকতার বাইরে যেয়ে নিজের মুনশিয়ানা দেখানো জরুরি। ভালো বলকেও অবলীলয় গ্যালারিতে পাঠাতে না পারলে এখানে সাফল্য পাওয়া মুশকিল। হায়দরাবাদে তেমনই দেখিয়েছেন স্যামসন, সূর্যকুমার, হার্দিকরা।
জায়গায় দাঁড়িয়ে অবলীলায় তারা বল পাঠিয়ে দিয়েছেন গ্যালারিতে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা ভালো বল দূরে থাক; মারার বলকেও বাউন্ডারিতে পরিণত করতে পারেন না। শেষ টি২০ তে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারের পঞ্চম ওভারে লিটন দাস পাঁচটি চার হাঁকান। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে তাওহিদ হৃদয় দেন মেডেন! এটা কি ভাবা যায়! যেখানে প্রায় তিনশ’ রান তাড়া করার প্রশ্ন, সেখানে আগের ওভারে পাঁচটি বাউন্ডারি পাওয়ার পরও পরের ওভার মেডেন হয়!
এই হৃদয় পরে হাফসেঞ্চুরি করেছেন কিন্তু তাতে দলের কি লাভ হয়েছে! এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন প্রায় সবাই। ওই সময় যে কোনো দল আরও বেশি রানের জন্য পাগল হয়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা পারেনি। আসলে সেই পারার সামর্থ্য নেই। এমনই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিসিবির সাবেক পরিচালক ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ খন্দকার জামিল উদ্দিন আফসোস করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ টিমকে এতটা অসহায় আগে কখনো মনে হয়নি। আক্ষেপের সুরে তাই তিনি বলেন, টি২০ ক্রিকেটটা না খেললে হয় না!’
সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক ও চ্যানেল আইয়ের বিশেষ সংবাদদাতা সাইদুর রহমান শামীম বলেন, ‘ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ফরম্যাটেই ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই নিকট ভবিষ্যতে । ল অফ অ্যাভারেজের থিউরি অনুযায়ী মাঝেমধ্যে আমরা দু’একটা ম্যাচ জিতি, এর বেশি কিছু নয়। জুয়া বা ক্যাসিনোতে দেখা যায়, প্রবাবিলিটি মেনে ‘গুডলাক’ বোর্ডে খেলতে থাকা সবার কাছেই পর্যায়ক্রমে রোল করে। বাংলাদেশের ছেলে এবং মেয়ে ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সও এমনই। মেয়েরা সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২০ ওভার ব্যাট করে ৭ উইকেট সুরক্ষিত রেখে করেছে মাত্র ১০৬!
এদের মাইন্ডসেটই তো বলছে, এরা খেলাটাই বোঝে না! অথচ এদের পেছনে কত দেশি বিদেশি কোচ, কত ট্যুর, কত অজুহাত! পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর কত প্রতিশ্রুত-প্রত্যয়! মাঝেমধ্যে মনে হয় ১৬ কোটি মানুষের দেশের প্রতি ভালোবাসা, ক্রিকেট প্রেমের কারণে উপার্জিত টাকা অথবা সোনার ডিমপাড়া হাঁসটিকে একবারে খেয়ে ফেলার জন্যই আমাদের দেশের ক্রিকেটকে ঘিরে দুধের মাছিদের আনাগোনা। না হলে ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্স দুই যুগে একই বৃত্তে ঘুরপাক খাবে কেন?’
২০০৬ সাল থেকে টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। এরপরের বছর বিশ্বকাপে মোহাম্মদ আশরাফুল ও আফতাব আহমেদদের হাত ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সাড়া ফেলে টাইগাররা। ওই সময়ে বাংলাদেশের খেলার ধরন ছিল বেশ আগ্রাসী। দেশের ক্রিকেটভক্তরা ভাবতে শুরু করেছিলেন, নিজেদের জন্য আদর্শ একটা ফরম্যাট বুঝি পেয়েই গিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দেড়যুগে টি২০ ক্রিকেটে প্রত্যাশা তো পূরণ হয়নি; বরং বাংলাদেশের এই ফরম্যাটে খেলার সামর্থ্য আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেছে।