
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উপজেলা শাখার দুইটি গ্রুপ একই স্থানে, একই সময়ে সমাবেশ ডাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা থাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টায় পৌর এলাকার রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি’র চন্দন সমর্থিত গ্রুপ ও মোস্তফা সমর্থিত গ্রুপ। পরে বিকেলে সমাবেশ স্থল পরিবর্তন করে আক্কেলপুর সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে কমিটি ঘোষণা করেছে চন্দন সমর্থিত গ্রুপের পৌর বিএনপি নেতারা।
জানা গেছে, পৌর এলাকার ১, ২ ও ৩ ওয়ার্ড কমিটি গঠণের লক্ষ্যে কাউন্সিল সমাবেশ করার জন্য উপজেলা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চন্দন সমর্থিত গ্রুপের পক্ষ থেকে গত ১৫ অক্টোবর পৌর বিএনপির আহব্বায়ক আলমগীর চৌধুরী বাদশা ও যুগ্ন আহব্বায়ক আফাজ উদ্দীন মন্ডল যৌথভাবে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে থানায় একটি লিখিত আবেদন করেন। সেই মোতাবেক কাউন্সিল সমাবেশ জন্য বৃহস্পতিবার
সকাল থেকে তারা সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
এদিকে পৌর এলাকার ১,২ও ৩ ওয়ার্ডের কমিটি গঠণের বিরুদ্ধে একই স্থানে ও একই সময়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় থানায় আরেকটি লিখিত আবেদন করেন সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা সমর্থিত গ্রুপের পক্ষ থেকে মো ফারুক নামের এক ব্যক্তি।
একই সময় ও একই স্থানে বিএনপি’র দুটি গ্রুপ সমাবেশ আহব্বান করায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশংকা করে বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সমাবেশ স্থলসহ আশেপাশের ১ কি.মি. এলাকা পর্যন্ত সকল প্রকার সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মনজুরুল আলম। ঘটনাস্থলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পকেট কমিটি গঠণের অভিযোগ এনে গত কয়েকদিন ধরে একাধিকবার বিক্ষোভ মিছিল ও নানা কর্মসূচী পালন করেছ সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা সমর্থিত গ্রুপের নেতা কর্মীরা।
চন্দন সমর্থিত গ্রুপের পৌর বিএনপি’র যুগ্ন আহব্বায়ক আফাজ উদ্দীন মন্ডল বলেন, পৌর বিএনপি’র ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড কমিটি গঠণের জন্য কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৫ অক্টোবর কাউন্সিল সমাবেশের অনুমতি চেয়ে থানায় আবেদন করেছিলাম। সমাবেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর আরেক গ্রুপ কমিটি গঠণের প্রতিবাদে আমাদের সমাবেশ ভন্ডুল করতে তারা আরেকটি আবেদন করেছে। এই ঘটনায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা সমাবেশ স্থল পরিবর্তন করে আক্কেলপুর সিনিয়র মাদ্রাসা মাঠে ওই ৩টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছি।
এবিষয়ে চন্দন গ্রুপ সমর্থিত উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ন আহব্বায়ক কামরুজ্জামান কমল বলেন, আমরা পৌর বিএনপি’র কমিটিকে গতিশীল করতে পৌরসভার ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে কমিটি গঠণ করার জন্য পৌর বিএনপি’র পক্ষ থেকে কাউন্সিল সমাবেশ করার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। এই কমিটি গঠণকে পন্ড করার জন্য উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একই স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাক দেয়। এতে উভয় পক্ষের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
পকেট কমিটি গঠণের অভিযোগ এনে মোস্তফা গ্রুপ সমর্থিত উপজেলা বিএনপি’র আহব্বায়ক কমিটির সদস্য এম.কেরামত আলী বলেন, আমরা পকেট কমিটি গঠনের বিপক্ষে রয়েছি। স্বচ্ছ কমিটি গঠণের জন্য স্ব-স্ব ওয়ার্ডে ৩ দিন আগে মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে হবে। পকেট কমিটি গঠণের জন্য কেউ চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক আদর্শ মেনে সকল কমিটি গঠণ করতে হবে।
আক্কেলপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মইনুল ইসলাম বলেন, তারা উভয় পক্ষ সমাবেশ করার জন্য থানায় লিখিত আবেদন করেছে, কোন পক্ষকেই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কেউ আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটনার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মনজুরুল আলম বলেন, উভয় পক্ষের সাথে কথা হয়েছে, তারা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কেউ এটি অমান্য করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।