শব্দের আড়ালে গল্প: ইমোজি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ । ২:৫৯ অপরাহ্ণ

অর্থ প্রকাশক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে আমরা বলি শব্দ। শব্দ হলো ভাষার প্রাণ। যে ভাষার শব্দভান্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ, সেই ভাষা তত বেশি উন্নত। আর ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের সংগ্রহমূলক গ্রন্থ হলো অভিধান। আমরা অভিধানে শব্দের একটি অর্থ যেমন পাই, তেমনি একটি শব্দের একাধিক অর্থও পাই। শব্দের অর্থ সব সময় একই রকম থাকে না। কালের পরিক্রমায় একটি শব্দ একাধিক নতুন নতুন অর্থ পরিগ্রহ করে। ভুক্তি শব্দের সঙ্গে অর্থের সব সময় যে মিল থাকে, এমনটিও নয়। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারে ভুক্তি শব্দের কখনো আক্ষরিক আবার কখনো আলংকারিক অর্থ প্রধান হয়ে ওঠে। আর এসব অর্থের ঠাঁই হয় অভিধানে। এ জন্যই অভিধান হলো শব্দের রহস্যঘেরা এক বিস্ময়কর জগৎ। এতে অবগাহন করে নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্ক স্থাপন করে শব্দের মণিমুক্তা কুড়াতে হয়। ভুক্তি শব্দের সঙ্গে অর্থ গঠনের যে বোঝাপড়া তার পেছনে কাজ করে মানুষের বহু বিচিত্র সব চিন্তাভাবনা। এ সূত্র ধরেই আমরা ধারাবাহিকভাবে জানব কোনো শব্দ বা শব্দবন্ধের অর্থের গল্প।

বর্তমান যুগ অবাধ তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির যুগ। এই যুগে আমরা প্রায় সবাই একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে যুক্ত রয়েছি।আর এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছে মেসেজিং ও চ্যাটিং পদ্ধতি। এই মেসেজিং ও চ্যাটিংয়ের সময় আমরা বিভিন্ন ধরনের ইমোজি ব্যবহার করি।

অনেকেই লিখে কিছু বোঝানোর বিকল্প হিসেবে ইমোজি ব্যবহার করেন, যার ফলে সহজেই অন্যের কাছে নিজের অনুভূতি বা কোনো ঘটনা বর্ণিত হয়ে যায়। কেননা, বক্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো একটি ছবি হাজারটা কথার সমান। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আমরা প্রায় সবাই ইমোজি ব্যবহার করি। এখন প্রশ্ন হলো, এই ইমোজি আসলে কী? এর অর্থ কী? কীভাবে এল ইমোজি? আজ জানব ইমোজির ইতিবৃত্ত।

লিখিত শব্দ ছাড়াও মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে একটি সহজতম উপায় হলো ইমোজি ব্যবহার। ইমোজি জাপানি শব্দ। জাপানি ‘ই’ শব্দের অর্থ হলো ছবি বা চিত্র আর ‘মোজি’ মানে হলো অক্ষর, লিপি। ইমোজির আক্ষরিক অর্থ হলো চিত্রলিপি। আরেকটু সহজ করে বললে, লেখা ও ছবিতে ফুটিয়ে তোলা চরিত্রই হলো ইমোজি। ইমোজি ভাব নির্দেশক চিত্র হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়। যেমন বিভিন্ন মুখভঙ্গি বা অঙ্গভঙ্গি, জীবজন্তুর চিত্র প্রভৃতি। ইমোজির ব্যবহার সূক্ষ্ম বা আবেগপূর্ণ অনুভূতি প্রকাশে অধিক কার্যকর পদ্ধতি। ১৯৯৯ সালে জাপানি নকশাকার শিগোতাকা কুরিতা প্রথম ইমোজি নিয়ে কাজ করেন।

তিনি তখন ১৭৬টি ক্ষুদ্রাকার ছবি এঁকেছিলেন। নানা রকম অনুভূতি প্রকাশ করা এই ইমোজিগুলো জায়গা নিয়েছিল মাত্র ৩ কিলোবাইট। জাপানি টেলিকম প্রতিষ্ঠান এনটিটি ডোকোমোর জন্য কাজটি তিনি করেছিলেন। আমরা ইমোজির সঙ্গে আরেকটি শব্দ পাই, যেটি হলো ইমোটিকন। ইমোজি ও ইমোটিকন আলাদা অর্থ প্রকাশক দুটি শব্দ। ইমোটিকন হলো কিবোর্ডের যতি চিহ্ন ব্যবহার করে বিভিন্ন মুখাবয়ব তৈরি করা। ইমোজি আসার আগে ইমোটিকন দিয়ে অনুভূতি তথা মুখভঙ্গি প্রকাশ করা হতো।

ইমোজিকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত প্রভাব বিস্তারকারী ভাষা। প্রতিবছরের ১৭ জুলাই উদ্‌যাপিত হয় ‘বিশ্ব ইমোজি দিবস’। প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় ইমোজি শব্দটি ২০১৩ সালে অক্সফোর্ড অভিধানে জায়গা করে নেয় এবং ২০১৫ সালে ‘আনন্দের অশ্রুসহ মুখাবয়ব’ ইমোজিটিকে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ারে’ ভূষিত করে অক্সফোর্ড অভিধান কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে অ্যাপল তাদের আইওএস সিস্টেমের কিবোর্ডে ইমোজি যোগ করে। পরে অ্যান্ড্রয়েড ফোন অ্যাপেলকে অনুসরণ করে তারাও ইমোজি গ্রহণ করে। ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে ইমোজির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা রকমের অ্যানিমেশন। ইমোজির জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বাড়তে থাকায় ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে দ্রুত মনের ভাব প্রকাশক ইমোজির শক্তিশালী লাইব্রেরি।

ভাষিক বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা নানা রকম ইমোজি ব্যবহার করি। ইমোজির ব্যবহার দেশে দেশে সব সময় সমার্থবোধক নয়। কেননা, ইমোজির কোথাও কোথাও সংস্কৃতিনির্ভর অর্থও পরিলক্ষিত হয়। তথ্যপ্রযুক্তির অব্যাহত কল্যাণে ইমোজি আমাদের নিত্যদিনের ভাবের আদানপ্রদানে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
খবর: আজকের পত্রিকা

প্রধান সম্পাদক: মোঃ তোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ মাহাবুবুল আলম ওহাবুল, প্রকাশক: মোঃ বখতিয়ার ঈবনে জীবন, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: চিলাহাটি, নীলফামারী। যোগাযোগ: +৮৮০ ০১৭১৮৩২৪৭৮৬ E-mail: infobanglarawaz@gmail.com

প্রিন্ট করুন