
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) যুব ফোরামকে সম্পৃক্ত করে শিশু সুরক্ষা ও কিশোর-কিশোরীদের উন্নয়নে টেকনাফ উপজেলায় কাজ করে যাচ্ছে। এএসডি এর উদ্যোগে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন শোষণ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।
সাবরাং এ্যাডলোসেন্ট ফ্রেন্ডলি স্পেস (এএফএস) এ অনুষ্ঠিত উক্ত মত বিনিময় সভায় বিভিন্ন পেশাজীবি এবং এলাকার ইয়ুথ ফোরাম সদস্যবৃন্দ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য যে এএসডি দাতা সংস্থা জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিস (জিএফএফও) এবং ডায়াকনি ক্যাটাসট্রোফেন হিলফে (ডিকেএইচ) এর অর্থায়নে হিউম্যানিটেরিয়ান এ্যাসিস্টেন্স ইন দি সেক্টরস অব প্রোটেকশন, ওয়াশ, শেল্টার/এনএফআই এজ ওয়েল এজ সাইট ম্যানেজমেন্ট এন্ড সাইট ডেভেলপমেন্ট ফর রোহিঙ্গা এন্ড হোস্ট কমিউনিটিজ ইন কক্সবাজার, বাংলাদেশ- প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে।
উক্ত প্রকল্প নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের উন্নয়ন ও সৃজনশীল চর্চার বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। কমিউনিটি বেইজড শিশু সুরক্ষা কমিটির (সিবিসিপিসি) সামর্থ্য বৃদ্ধি করে কিশোর-কিশোরী এবং যুব সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা সামাজিক সুরক্ষায় ‘এএসডি’ নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ‘এএসডি’ এর চলমান প্রকল্পের শিশু সুরক্ষার বিষয়টি অধিকার ভিত্তিক এপ্রোচ এর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। কার্যকর পরিকল্পনার ভিত্তিতে কমিউনিটির সকল পর্যায়ের জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ত করে এর সফলতা আনয়নে কাজ করছে। উক্ত সংস্থা শিশু সুরক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে এবং যৌন শোষণ ও যৌন নির্যাতন প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কেননা পারিবারিক পর্যায়ে কন্যাশিশু ও নারী অধঃস্থনতার শিকার।
বৈষম্যের এই বেড়াজালে দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশকে অনগ্রসর পর্যায়ে রেখে উন্নয়ন চিন্তা অসম্ভব। পাশাপাশি যৌন শোষণ ও যৌন নির্যাতনের মতো নিকৃষ্টতম হেন কাজও সমাজের রন্ধ্রে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই কথা ধ্রুব সত্য যে পারিবারিক পর্যায়ে নারী নির্যাতন ও নারী নিগ্রহের ঘটনা অনেক বেশি বেড়েছে এবং কর্ম পরিবেশ তথা সামাজিক পরিমন্ডলে যৌন শোষণ ও নির্যাতনের সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ততোধিক। উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ‘এএসডি’-র বিষয়ভিত্তিক এই ধারণা অনেক গভীর। ফলে কিশোর-কিশোরী ও যুব ফোরামের অধিকার ভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি তথা উন্নয়নের স্রোতে জেন্ডার বৈষম্য, জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্স, যৌন শোষণ ও যৌন নির্যাতন ইত্যাদি ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছে।
অতএব চলমান প্রকল্পের উক্ত ইস্যুগুলোকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে ‘জিরো ভায়োলেন্স’ নীতি অনুসরণ করে ইতিবাচক পরিবর্তনে জোরালো ভূমিকা নিচ্ছে। উক্ত মতবিনিময় সভায় সমাজে প্রচলিত নারী পুরুষের বৈষম্যময় চিন্তা ও আচরণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। যেখানে পুষ্টি-খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পারিবারিক ও সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ, অংশগ্রহণ, বিনোদন, আয়-উপার্জন চাকুরি, সম্পত্তির অংশীদারিত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রতি ধাপে এই কিশোরী এবং নারীর অবস্থান তুলে ধরা হয়। কর্ম পরিবেশেও কিশোরী ও নারী নিগ্রহের অসংখ্য ধরন লক্ষ্যনীয় যেমন- যৌন শোষণ, যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানি একটি নিত্য নৈমত্তিক সাধারণ ঘটনার মতো। কমিউনিটি পর্যায়ের দারিদ্র্য, স্বল্প শিক্ষা, অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা এবং অসচেতনতাকে পুঁজি করে সেবাদানকারী কর্তৃক যৌন শোষণ, যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানির ঘটনা ক্রমবর্ধমান।
‘এএসডি’ উক্ত ইস্যুগুলোকে কমিউনিটি পর্যায়ে উল্লেখযোগ্যভাবে তুলে ধরার প্রয়াসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় যৌন শোষণ, যৌন নির্যাতন ও যৌন হয়রানির কারণ আলোচনা করা হয়। এছাড়াও পারিবারিক পর্যায়ে নারী নির্যাতনের কারণ এবং এর সম্ভাব্য প্রতিকারসমূহ ছিল আলোচনার উপজীব্য বিষয়। উল্লেখ্য যে ‘এএসডি’ নারীর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন শোষণ ও যৌন নির্যাতন রোধে পলিসি প্রণয়ন করা, অভিযোগ বক্স স্থাপন, কর্মীবৃন্দের মাধ্যমে আচরণবিধি স্বাক্ষরকরণ, মানব সম্পদ বিভাগের সাথে যৌন শোষণ ও যৌন নির্যাতনের ধারণাকে অন্তর্ভুক্তিকরণ, কর্মীদের
প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা তথা তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে সাড়াপ্রদানের অঙ্গীকার গৃহীত হয়। এএসডি-র প্রকল্প ব্যবস্থাপক জনাব রোকন উদ্দিন আহমেদ এর সঞ্চালনায় টেকনাফ প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি মোঃ আশেক উল্লাহ ফারুকী সমাপনী বক্তব্যে বলেন, যে নারী অধিকারের বিভিন্ন ইস্যুর উপর অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের উন্নয়নে নিরাপদ পরিবার ও সমাজ প্রতিষ্ঠা জরুরি।কর্ম এলাকার বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবিদের যুক্ত করে একটি সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে এবং যেখানে সকল কিশোর-কিশোরী ও নারী শিক্ষা ও কারিগরী জ্ঞান বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে। পরিবার ও সমাজ থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে হবে এবং কর্ম পরিবেশে নারীর প্রতি যৌন শোষণ ও নির্যাতন বন্ধ করতেই হবে। উক্ত মত বিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মাহফুজা আকতার, ফাহিনুল ইসলাম, রেহানা আকতার,মুসফিকা সুলতানা এবং নাসরিন আকতার পলি প্রমূখ।