
আগামী বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ১৩ অক্টোবর রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ৫ দিনব্যাপী এ উৎসবের।
দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যুহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন , ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
‘মহা চন্ডীতে উল্লেখ আছে, ত্রেতা যুগে ভগবান রাজা রাম চন্দ্র দশানন রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে রত হন। পাপের বিনাশের লক্ষ্যে দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎ কালে তার পূজা করেছিলেন এবং যুদ্ধে জয়লাভ করে দেবী সীতাকে উদ্ধার করেন ও রাবণকে হত্যা করতে সক্ষম হন রাম চন্দ্র। সেই থেকে পৃথিবীতে প্রতি বছর শরৎকালে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন।
লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরের সার্বজনীন শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গোৎসব পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোপন কান্তি চৌধুরী বলেন, লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী ও ১২ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরের সার্বজনীন শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গোৎসব পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান কান্তি দাশ জানান, এবছরে দেবী দুর্গার আগমন হবে দোলায় বা পালকিতে। এছাড়াও দেবী স্বর্গে গমন করবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। বুধবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে সায়াংকালে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা বিকেল ৫ টার পরে আরম্ভ হবে।
লামা কেন্দ্রীয় হরি মন্দিরের সার্বজনীন শ্রীশ্রী শারদীয়া দুর্গোৎসব পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক রতন কান্তি দত্ত বলেন, পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি প্রায়ই শেষ হয়েছে। পূজাকে কেন্দ্র করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মন্ডপ।
লামা হরি মন্দির কমিটির সভাপতি বাবু প্রশান্ত ভট্টাচার্য্য বলেন, বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা আগামী বুধবার থেকে শুরু হবে যা আগামী ১৩ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এবছর লামা উপজেলায় ৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিটি পূজামন্ডপের রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। মন্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। দুর্গোৎসব উপলক্ষে সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।