পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ জানান দিচ্ছে নবান্নের

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থানাসহ ১৩টি থানায় শুরু হয়েছে হেমন্তের আগাম ধান কাটা। কিন্তু হেমন্তের অন্যতম নবান্ন উৎসব এখন আর চোখে পড়ে না। কালক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবটি।
হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই কৃষিপ্রধান এই বাংলাদেশে সূচনা হয় নবান্ন উৎসব।হেমন্ত আসে ধীর পায়ে শিশিরস্নাত শীতল পরশ আলতো গায়ে মেখে।
ঋতুর রানি হেমন্তে নতুন ফসলের মৌ মৌ গন্ধে প্রকৃতিতে প্রশান্তির ভাব চলে আসে। ভোরের কুয়াশায় ফসলের মাঠে, গাছের পাতায়, ঘাসের ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশির জমে। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে ফসলের মাঠে ওড়াউড়ি করে প্রজাপতি, ভ্রমর আর ঘাসফড়িংয়ের দল। হেমন্তের ফোটে ফুল শিউলি। দোলনচাঁপাও সুবাস ছড়ায় চারিদিকে। নবান্নের ঋতু হেমন্তকে ঘিরে কবি-সাহিত্যিকরা লিখেছেন গল্প, কবিতা আর গান। কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন- ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে’। সত্যিই কবিতার মতোই সুন্দর নবান্নের চিরায়ত এই বাংলার গ্রামীণ রূপ
শিশির ভেজা প্রকৃতি জানান দেয় হেমন্ত পেরিয়ে আসছে শীত। বছর ঘুরে আবার এসেছে আরেকটি আয়োজনের উপলক্ষ। আবহমান বাংলার অন্যতম উৎসব নবান্ন মৌসুম এটি। কিন্তু কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে এই নবান্ন উৎসব।
বাংলাদেশে যতগুলো উৎসব হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রচলিত নবান্ন উৎসব। হেমন্তকালের এ উৎসব ছিল সর্বজনীন।
জানা যায়, হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। নবান্ন অর্থ- নতুন অন্ন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। নবান্ন হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব, যা সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে ডেকে বসিয়ে খাওয়ানো হয়। অনেক জায়গায় নবান্ন উপলক্ষে মেলাও বসানো হয়।
নবান্ন উৎসব নিয়ে কথা হয় কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চিকনির চর গ্রামের মনিরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমরা দল বেধে সবাই সবার বাসায় খেয়ে বেড়াতাম। কিন্তু এখন আর সেটা দেখা যায় না। নবান্ন উৎসব আর আগের মতো হয় না। যে যার মতো নবান্ন উৎসব করে থাকে।
হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউপির সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুল হক মাখন মৃধা বলেন, আমি ছোট থাকতে নবান্ন উৎসবকে ঘিরে অনেক আনন্দ করেছি। যা বর্তমানে আর সেই আনন্দ পাই না।
একই উপজেলার সিদলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীন বলেন, হেমন্তের ধান কাটা শুরু হলেই আমার মনে ভেসে ওঠে নবান্ন উৎসবের আমেজ। কিন্তু বর্তমানে সেটা আর গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না। আমরা ছোট বেলায় দল বেধে একে অপরের বাসায় খেতাম এবং নবান্ন উৎসবকে নতুনভাবেই বরণ করে নিতাম। কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েরা শুধু নামেই জানে নবান্ন উৎসব। আগের মতো তারা আর নবান্ন উৎসবে আনন্দ করতে পারে না।