দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিষয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু আগামিকাল

‘আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও জীবাশ্মসম্পদের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে চতুর্থ কৃষি বিপ্লব বাস্তবায়ন’ প্রতিপাদ্যে দেশে প্রথমবারের মতো কৃষি যান্ত্রিকীকরণ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আগামিকাল বুধবার শুরু হতে যাচ্ছে। দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলনটি বাংলাদেশ সোসাইটি অব এগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই) এবং বাংলাশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাকৃবির সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, কৃষি প্রকৌশলী, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা এবং কৃষকসহ প্রায় তিন শতাধিক মানুষ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অফিসের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়াল। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আব্দুল মজিদ, আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিক-ই-রব্বানী, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. টুম্পা রাণী সরকারসহ আয়োজক কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও জীবাশ্মসম্পদের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় এই সম্মেলনে প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, বর্তমান বিশ্বে কৃষির চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি, জিপিএস ও জিআইএস প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষির উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়ছে, তেমনি শ্রম ও ব্যয়ের পরিমাণ কমে আসছে। তবে এসব প্রযুক্তি কীভাবে দেশের কৃষি ব্যবস্থায় কার্যকরভাবে একীভূত করা যাবে, কীভাবে কৃষকরা এর সুবিধা পাবেন এবং কীভাবে এটি কৃষিকে আরও লাভজনক করে তুলবে- এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্যই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সম্মেলনে বাংলাদেশের কৃষি প্রকৌশলীরা কীভাবে কৃষির টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এবং সরকার, নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী ও কৃষকের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কীভাবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে লাভজনক করা যায়- এসব বিষয় নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে প্রান্তিক কৃষক পর্যন্ত সকলের মতামত নেওয়া হবে । দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, নীতিনির্ধারক ও উদ্যোক্তাদের উপস্থিতিতে এই সম্মেলন হবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান আদান-প্রদানের এক বিশাল ক্ষেত্র।
সম্মেলন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিক-ই-রব্বানী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কৃষি গবেষক ও প্রযুক্তিবিদরা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন। ছয়টি টেকনিক্যাল সেশন, একটি ব্যবসায়িক সেশন এবং দুটি পোস্টার সেশনে মোট ১৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। এছাড়াও একটি কৃষি যন্ত্রপাতি মেলার আয়োজন করা হবে যেখানে দেশের স্বনামধন্য আটটি প্রতিষ্ঠান তাদের কৃষিবিষয়ক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শন করবেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোও প্রদর্শন করা হবে।
আয়োজকবৃন্দ আরও জানান, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় চতুর্থ কৃষি বিপ্লবের লক্ষ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও জীবাশ্মসম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সম্মেলনে যেসকল সুপারিশ উঠে আসবে সেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে কাজ করবে বাংলাদেশ সোসাইটি অব এগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই)। দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এই সুপারিশগুলো লিখিত আকারে প্রদান করা হবে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্যই হলো আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষির সমস্যা, সমাধান ও উন্নয়নের সকল তথ্য কৃষির সকল পর্যায়ের ব্যক্তবর্গের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া।