ইসলামে শরীর চর্চার গুরুত্ব।

স্বাভাবিকতই ইবাদতের জন্য কায়িক ও শারীরিক শক্তি-সামর্থ্য প্রয়োজন। শারীরিক শক্তি ও কায়িক সামর্থ্য আল্লাহর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। রাসুল (সা.) বলেছেন-‘যে ইমানদার ব্যক্তির শারীরিক শক্তি আছে, সে শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর কাছে প্রিয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৯৪৫)
কারণ ইবাদত করার জন্য শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার জন্যও শক্তি প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে মানবদেহ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে বার্ধক্য আসার আগেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়। এজন্য শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এক সাহাবি সারা দিন রোজা রাখতেন আর রাতভর নামাজ পড়তেন। রাসুল (সা.) তাকে সতর্ক করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০৩; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৫০)
এছাড়াও হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) পাঁচটি অমূল্য সম্পদ হারানোর পূর্বে সেগুলোর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। এর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য। তিনি বলেন, ‘পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন কোরো জীবনকে মৃত্যু আসার আগে, সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে, অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে, যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং সচ্ছলতাকে দারিদ্র্য আসার আগে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৮/১২৭; সহিহুল জামে, হাদিস : ১০৭৭)
প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের অনেক স্থানে কুস্তি খেলার একটা প্রচলন ছিল। এর মাধ্যমে পরস্পরের শক্তি পরীক্ষার একটা সুযোগ থাকে। শারীরিক সামর্থ্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতার মানসিকতাও তৈরি হয়। ফলে এই খেলাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হয়। রাসুল (সা.)-এর যুগেও কুস্তি খেলার প্রচলন ছিল। বদরের যুদ্ধের আগে রাসুল (সা.) তার যোদ্ধা বাহিনীতে যোগদানে ইচ্ছুকদের শারীরিক সামর্থ্য যাচাই করেন। পাশাপাশি অপ্রাপ্ত বয়স্কদের মূল বাহিনী থেকে আলাদা করছিলেন।
এদের মধ্যে সাহাবি রাফে ইবনে খাদিজ (রা.) ও সামুরা ইবনে মুররি (রা.) নামক দুই কিশোরও ছিলেন। তাদের যখন যোদ্ধা বাহিনী থেকে আলাদা করে দেওয়া হচ্ছিল, তখন রাফে তার পায়ের অগ্রভাগের ওপর ভর করে দাঁড়ালেন। যাতে তাকে লম্বায় প্রাপ্তবয়স্কের মতো বড় দেখায়। সে পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণও হয়েছিলেন। তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই কৌশলের মাধ্যমে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ পান।
কিন্তু সামুরা সেনাবাহিনীতে থাকার অনুমতি না পেয়ে রাসুল (সা. এর কাছে গিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! রাফেকে যখন যোদ্ধা বাহিনীতে থাকার সুযোগ দিচ্ছেন, তখন আমাকেও থাকার অনুমতি দিন। কারণ আমি তাকে কুস্তি প্রতিযোগিতায় পরাজিত করতে পারি।’ এ কথা শুনে রাসুল (সা.) তাদের দুজনের মধ্যে কুস্তির আয়োজন করেন। তুমুল লড়াইয়ের পর সামুরা রাফেকে পরাজিত করেন। রাসুল (সা.) খুশি হয়ে তাকেও বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে নেন। (সিরাতে ইবনে হিশাম : বদর যুদ্ধের অধ্যায়)।