ডোমারের বিএডিসি খামারে আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

নীলফামারীর ডোমারে বীজআলু উৎপাদন করে কৃষকের চাহিদা মেটাচ্ছে বিএডিসি। বীজ আলু উৎপাদনে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা প্রতিফলিত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ৪০৫.৬৬ একর জমিতে বিভিন্ন ধরণের বীজআলু উৎপাদন করে প্রশংসা করাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি।
খামারটিতে বীজআলু চাষাবাদের পাশাপাশি বোরো, আউশ, আমন ধানও চাষাবাদ করা হয়। উৎপাদিত সব ফসল বীজ হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে বীজ আলুর আন্তঃপরিচর্যা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিএডিসি কর্তৃক ইতোপূর্বে ১৬টি নতুন জাতের বীজ আলু নিবন্ধন করা হয়। এছাড়া ৭-কিশোরগঞ্জ ও রেজা নামের আরও ২টি জাত নিবন্ধনের জন্য প্রস্তাবিত রয়েছে। নিবন্ধিত জাতগুলো হলো- সানশাইন, প্রাডা, সান্ত্বনা, ইনোভেটর, এডিসন, কুম্বিকা, কুইন অ্যানি, ল্যাবেলা, কেএসি-৮১, অ্যাললেন্ডার, ডেলিয়ারেট, রাশিদা, জিনারড, এসএইচসি-১০১০, ব্রিয়ানা ও লুগানো।
আরও জানা যায়, বর্তমানে এখানে উচ্চ ফলনশীল মনটানা, ক্যাপ্টিভা, জেলি, ভিন্ডিকা, লরা, ইউনিকা, আর্লি ভ্যালি ও রোজালিন জাতের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। এছাড়া প্রায় এক একর জমিতে বীজ আলুর নতুন জাতগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা, গবেষণার মাত্রা সম্প্রসারণ ও জার্মপ্লাজম সংরক্ষের লক্ষ্যে ৯০টি জাতের সমন্বয়ে একটি জীবন্ত জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
জাতীয় গুরুত্ববহনকারী ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে বীজ উৎপাদনে ৬০০.৭৪ একর জমি রয়েছে। এর আওতাধীন ৭টি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরিতে চলতি বছর ৩২টি জাতের প্রায় ২০ লাখ ভাইরাসমুক্ত প্লান্টলেট উৎপাদন হয়। খামারের দুটি হিমাগার সহ অন্যান্য হিমাগারে সংরক্ষণ করে প্রতিবছর ৫০ হাজার মেট্রিকটন বীজ আলু চাষী পর্যায়ে বিপণন করা হয়। এছাড়াও শিল্পে ব্যবহার, রপ্তানি উপযোগী এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিএডিসি সূত্র জানায়, ১৯৫৭-৫৮ সালে সরকার ডোমার খামারটি প্রতিষ্ঠা করে। তৎকালীন কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। বীজআলু উৎপাদনে অধিক উপযোগী মনে করে ১৯৮৯-৯০ সনে খামারটি আলুবীজ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়।
খামারের কাজ করতে আসা শ্রমিক মনু রাম রায় বলেন, ডোমার বিএডিসি ভিত্তি বীজআলু উৎপাদন খামারে আমরা সারাবছর কাজ করতে পারছি। আগে বছরে একটি আবাদ করতো এরপর বসে থাকতে হতো। এখন এখানে কাজ করে পরিবারসহ ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করাচ্ছি।
সোনারায় এলাকার বাসিন্দা একরামুল হক বাদশা বলেন, আগে খামারটি ছিল উঁচু-নিচু। ঠিক মতো চাষাবাদ করতে পারতো না। তবে বর্তমান উপ-পরিচালক দ্বায়িত্বে থাকায় খামারে চাষাবাদ ও খামারে উন্নয়ন হয়েছে অনেক। খামারটিকে কেন্দ্র করে শত মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
বিএডিসির সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার বলেন, খামারটিতে উৎপাদিত সব আলু বীজ হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। আধুনিক যান্ত্রিকীকরণ পটেটো প্লান্টার দ্বারা আলুবীজ রোপণ, ডিগার দ্বারা আলু উত্তোলন করে গ্রেডার মেশিন দ্বারা বীজ আলু গ্রেডিং করে নিজস্ব হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়।
এবিষয়ে ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক আবু তালেব মিঞা বলেন, ৪০৫.৬৬ একর জমিতে আলু চাষ করা হচ্ছে। আশা করছি এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জন হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘খামারের প্রতি ইঞ্চি জমিকে আবাদের আওতায় এনে ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ-কারণে খামারটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’ বিশ্বায়নের যুগে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কৃষির ব্যবহারে খামারটির কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।###