উপজেলাকে নিজ হাতে সাজিয়ে বিদায় নিলেন নন্দীগ্রামের জনবান্ধব ইউএনও মো: হুমায়ুন কবির

চোখে ছিলো পানি, তবুও স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে সহকর্মী ও উপজেলার সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলেন ইউএনও মো: হুমায়ুন কবির। বুধবার রাতে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র বাসভবন থেকে বিদায়বেলায় দেখা গেছে এমন হৃদয় বিদারক চিত্র। বিদায়কালে অশ্রসিক্ত নয়নে ভারাক্রান্ত মনে ইউএনও মো: হুমায়ুন কবির বলেন, ভালো থাকুক নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রতিটি মানুষ।
১বছর ২মাস ১৬ দিনে আমার এ কর্মজীবনে সেরা সঞ্চয় আপনাদের ভালোবাসা। সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে বদলিজনিত কারণে কোনো জেলায় বা উপজেলায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেক রকমের সহযোগিতা ও ভালোবাসা আমি পেয়েছি। বিদায়বেলায় উপস্থিত বেশির ভাগের চোখেই ছিলো জল। আবেগ থামাতে না পেরে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ। জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট রবিবারে নন্দীগ্রাম উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন মো: হুমায়ুন কবির। এর পূর্বে ৩৫ তম বিসিএস এর মাধ্যমে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বগুড়ায় যোগদান করেন।
পরে তিনি সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় কাজ করেন।এসময় তিনি জ্বরাজীর্ণ উপজেলা ভূমি অফিসটিকে ঢেলে সাজান। উপজেলা ভূমি অফিসের গেট,রাস্তাা,গাড়ির গ্যারেজ,অফিসকক্ষ সংস্কার,সেবাপ্রার্থীদের জন্য গোলঘর স্থাপনসহ সেবা সহজীকরণে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সর্বশেষ তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এলও এবং আরডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মো: হুমায়ুন কবির নন্দীগ্রামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে তিনি সকলকে নিজের আপন মানুষ ভেবে কাজ করেছেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরকে সাজিয়েছে এক ভিন্নরকম ভাবে। পরিষদ চত্বরে ঢুকলেই যে কারোর মন ভরে যাবে। উপজেলা পরিষদের রাস্তা সম্প্রসারণ, উপজেলা পরিষদের গেট ও বাগান সংস্কার, অফিসার্স ক্লাবের দ্বিতীয় তলা নির্মাণ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাংলো এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসকক্ষ সংস্কার, ছায়াবীথি বাগান তৈরি, উপজেলায় আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লাইটের ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুরো চত্বরকে সাজিয়েছে নিজ হাতেই নিজ বাড়ির মত করে।
১বছর ২মাস ১৬ দিনের এই চাকুরী কালীন সময়ে জনসেবায় নিয়োজিত থেকে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন জনবান্ধব এই ইউএনও মো: হুমায়ুন কবির। মানবতার ক্ষেত্রে চুল পরিমাণও ঘাটতি রাখেননি। বিদায় বেলায় উপজেলার সরকারি দাপ্তরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল ও ক্রেষ্ট দিয়ে বিদায় সংবর্ধনা জানান মো: হুমায়ুন কবিরকে। রাকিব নামের এক উদীয়মান তরুণ ইউএনওর বিদায়ের খবর পেয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলেন, সরকারি রুটিন ওয়ার্কে থেকেও সাধারণের মন জয় করা একজন মানবিক উপজেলা নির্বাহী কার্মকর্তা (ইউএনও) হচ্ছেন মো: হুমায়ুন কবির স্যার। যোগদান করার পর থেকেই সরকারি সেবা সর্বসাধারণের দুয়ারে পৌছিয়ে দিতে নিজেকে নিবেদন করেছেন। গত ১বছরে তিনি তার কর্মের দ্বারা নন্দীগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করেছেন। বিশেষ করে অসহায় অবহেলিত মানুষদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে তিনি উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে গেছেন সরকারি সাহায্য নিয়ে। বাড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের প্রতি মানবিকতার হাত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দরজা সত্যিকার অর্থেই উন্মুক্ত ছিলো সকলের জন্য।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে তিনি একজন সজ্জন পরোপকারি ব্যক্তি হিসেবে অল্প সময়ে পেয়েছেন পরিচিতি। এছাড়াও ইউএনও হুমায়ুন কবিরের বিদায়ের খবর শুনে অনেকেই বলেন,রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়িসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করেছেন আমাদের মানবিক ইউএনও হুমায়ুন কবির স্যার। তিনি যেই উপজেলাতেই যাক না কেন আমরা তাকে সব সময় মনে রাখবো। অনাবিল, সুখ-শান্তিতে সমৃদ্ধ হোক স্যারের পারিবারিক জীবন, স্যার দীর্ঘজীবী হোক, সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধিতে আমাদের প্রিয় ইউএনও স্যার পৌঁছে যাক কাঙ্খিত গন্তব্যে। ভালো থাকুক ভালোবাসার প্রিয় স্যার, কখনো নন্দীগ্রাম উপজেলা বাসি স্যারের ভালোবাসা ভুলবে না।
উল্লেখ্য,সাবেক ইউএনও মো: হুমায়ুন কবির গত ৩১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলায় নয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।