আন্তর্জাতিক মানের হয়েও নানা সমস্যায় জর্জরিত চিলাহাটি স্টেশন

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সীমান্তবর্তী চিলাহাটি রেলস্টেশনটি আন্তর্জাতিক মানের হলেও জনবল সঙ্কট, নিরাপত্তার অভাব, বিদ্যুৎ সঙ্কটসহ আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। যার ফলে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগের সীমা নেই। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়, যে কোনো মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে।
চিলাহাটি থেকে ২০২১ সালে আন্তঃনগর নীলসাগর, তিতুমির ও বরেন্দ্র ট্রেন চলাচল শুরু করে। এরপর ২০২২ সালে ভারতের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। একই সালে জুন মাসে ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি ও ঢাকার মধ্যে মিতালি এক্সপ্রেস এবং পরবর্তীতে ২০২৩ সালে মে মাসে চিলাহাটি ও ঢাকার মধ্যে চিলাহাটি এক্সপ্রেস নামে আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। চিলাহাটি থেকে ঢাকা এবং বাংলাদেশ ও ভারতের চলাচলকারী মিতালি এক্সপ্রেসসহ মোট সাতটি ট্রেন দৈনিক চলাচল করে। এতে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে।
বর্তমানে চিলাহাটি রেল স্টেশনটি আইকনিক ডিজাইনে নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক রূপে স্টেশনটি সাজানো হচ্ছে। এই স্টেশনে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। এত কিছু হওয়া সত্ত্বেও রেল স্টেশনটি জনবল সঙ্কট, বৈদ্যুতিক সঙ্কট, নিরাপত্তা সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু কর্র্তৃপক্ষ তাতে দৃষ্টি দিচ্ছে না। রাত দিন ২৪ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল করে থাকলেও স্টেশন মাস্টারের পাঁচটি পদে আছে মাত্র দুজন। এই দুই জনের পক্ষে ১২ ঘণ্টা করে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। পয়েন্ট ম্যানের ছয়টি পদে আছে মাত্র চারজন, পটারের চারটি পদে আছে মাত্র দুজন, বুকিং ক্লাক তিনটি পদে আছে মাত্র দুজন।
চিলাহাটি রেল স্টেশনে শানডিং জামাদার নেই, যা ভীষণ প্রয়োজন। স্থায়ীভাবে রাখা ইঞ্জিন শানডিং জামাদার না থাকার কারণে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো এখানে আসার পর একই ইঞ্জিন ও চালক দ্বারা শানডিং করা ও বগি সংযোজন ও সঙ্কোচন করতে হয়- যা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হওয়ার কারণে প্রতিদিন চিলাহাটি থেকে ট্রেনগুলো দেরিতে ছেড়ে যায়। বিদ্যুতের সমস্যা একটি বিরাট সমস্যা। কারণ আইপিএস থাকা সত্ত্বেও পুরো স্টেশন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অন্ধকারে ডুবে থাকে। প্রায় সময় লোডশেডিং হয়, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আইপিএস দ্বারা বিদ্যুৎ চালু থাকার কথা কিন্তু গত ৬ মাস ধরে আইপিএস বন্ধ রয়েছে। সচল করার কোনো ব্যবস্থা আজও গ্রহণ করা হয়নি। গভীর রাতে বা সন্ধ্যার সময় যখন বিদ্যুৎ থাকে না, তখন যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।
এ ছাড়া বিশাল এলাকায় চিলাহাটি রেল স্টেশনে বহু কার্যক্রম চলমান কিন্তু জিআরপি পুলিশ ফাঁড়ি নেই। আছে মাত্র সাতজন আরএনবি সদস্য। যা নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। রেল স্টেশনে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু কাজের গতি খুবই শ্লথ। গত ৪ মাস ধরে প্লাটফরম সম্প্রসারণ কাজ শেষ না করার কারণে যাত্রীরা ঝুঁকির মধ্যে ট্রেনে ওঠানামা করছে।
রেল স্টেশন যাওয়ার পথে ৪০০ মিটার রাস্তার দূরাবস্থার শেষ নাই। যাত্রী সাধারণের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যাত্রীর সুবিধার্থে রাস্তাটি মেরামত করা প্রয়োজন বলে মনে করে এলাকাবাসী। চিলাহাটি রেল স্টেশনে প্রতি মাসে প্রায় ২০ হাজার যাত্রী উঠানামা করে থাকে। ঢাকা ও নিউ জলপাইগুড়ির মধ্যে গত এক মাসে ১৫০০ যাত্রী চলাচল করেছে। ভারত থেকে পণ্যবাহী পাথর পরিবহনে প্রতি মাসে রেল আয় করেছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তাই স্টেশনে নিরাপত্তা, জনবল নিয়োগ ও অন্যান্য সমস্যা সমাধান করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও যাত্রী সাধারণ।