লক্ষ্মীছড়িতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মতবিনিময় সভা

লক্ষ্মীছড়ি সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে আজ (৯ জানুয়ারি, ২০২৫) দুপুরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। সভাটি স্থানীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ উন্নয়নে অংশগ্রহণকারীদের একযোগ প্রচেষ্টার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করার জন্য আয়োজন করা হয়।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জিরুনা ত্রিপুরা বলেন, “পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির উন্নয়নে আমাদের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনকল্যাণ খাতে গুরুত্ব দিয়ে আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি, এবং স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি আমাদের অগ্রাধিকার।”
তিনি আরও বলেন, “লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে স্কুল অবকাঠামো না থাকা, বিদ্যুৎ সমস্যা, বাজার সহ নানা সংকটের কারণে উপজেলাটি পিছিয়ে পড়েছে। এ অবস্থায়, আমি এবং আমার দল সাধ্যমতো সমস্ত সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমরা লক্ষ্মীছড়ির অবকাঠামো উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।”
এদিনের মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অঃ দাঃ) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি এ সময় বলেন, “শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকার সদা প্রস্তুত, তবে এর জন্য স্থানীয় পর্যায় থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য প্রফেসর আবদুল লতিফ, প্রশান্ত কুমার ত্রিপুরা, শেফালিকা ত্রিপুরা, অনিময় চাকমা, নিটোল মনি চাকমা, মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম সুমন, এ্যাডভোকেট মনজিলা সুলতানা, মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম এবং লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেটু কুমার বড়ুয়া। তাঁরা প্রত্যেকেই তাদের বক্তৃতায় লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সেখানকার জনগণের জন্য উন্নত পরিষেবা প্রদান করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
মতবিনিময় সভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সমন্বয়ক রুপন চাকমা বলেন, “লক্ষ্মীছড়ি উপজেলাকে গত সরকারের পক্ষ থেকে অবহেলা করা হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ। আমাদের দাবি, আগামীতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা হোক, যাতে একমাত্র যোগ্য ব্যক্তিরাই নিয়োগ পান।”
তিনি আরও জানান, “স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতির প্রয়োজন। বিশেষ করে এক্সরে মেশিনের জন্য টেকনিশিয়ান না থাকা এবং হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে।”
বর্মাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, “সরকারি বাদে বর্মাছড়ি ইউনিয়নে কয়েকটি স্কুল রয়েছে, কিন্তু এখানে শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানি এবং পাঠাগারের অভাব রয়েছে। এগুলি সরবরাহ করা জরুরি।”
দুইল্যাতলি ইউপির চেয়ারম্যান ত্রিরোণ চাকমা বলেন, “বিগত সরকার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলাকে অবহেলায় রেখেছে। আজকের মতবিনিময় সভা একটি পদক্ষেপ, যা উন্নয়নের পথ খুলে দেবে।”
সভার শেষে প্রধান অতিথি লক্ষ্মীছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন এবং দীর্ঘদিন অযতেœ থাকা লক্ষ্মীছড়ি সদর ইউনিয়নের হাজাছড়া উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। তিনি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে, সমস্যাগুলি সমাধানের আশ্বাস দেন।
এছাড়া তিনি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল পরিদর্শন করেন, যেখানে তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখে, রোগীদের সাথে কথা বলেন। এক্সরে রুম পরিদর্শনকালে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন।
এদিনের মতবিনিময় সভা এবং পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত পরিদর্শন অনুষ্ঠান লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার উন্নয়নশীল ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।