লালমনিরহাটে তামাক চুরির মিথ্যা অপবাদে লজ্জিত কৃষক পরিবারঃ অভিযোগ দায়ের

মো:সিরাজুল ইসলাম পলাশ,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানাধীন ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের পুর্ব ভেলাবাড়ি এলাকার বাদশা মিয়া (৪৮)। তিনি নিজ জমিসহ, তার বাড়ির আশপাশের জমি বর্গা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদ করে আসছেন। এবারে তিনি চাষ করেছেন তামাক। তামাকের ব্যাপক ফলন হওয়ায় তার বাড়িতে চলছে তামাকের উৎসব। চারিদিকে শুধু তামাক আর তামাক। প্রায় ৯-১০ দোন (এক দোন ২৭শতক) জমিতে তিনি তামাক চাষ করেছেন ব্যাপক হারে। কিন্তু এত তামাক থাকার পরও সামান্য তামাক নিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন বাদশা মিয়ার নামে মিথ্যে তামাক চুরির অভিযোগ করায়, কথিত বিচারের নামে বাদশা মিয়াকে চোর সাব্বস্থ্য করায় মনে কষ্ট নিয়ে অবশেষে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বাদশা মিয়া।
ঘটনায় প্রকাশ, গত ১৫/০৩/২৪ ইং ভোর ৬টায় ১৫কেজি তামাক নিয়ে হাটে যাওয়ার সময় তিনি দেখতে পান তার বাড়ির সামনেই তামাকের পাইকার তামাক কিনতেছে। বাদশা মিয়া উক্ত তামাক পাইকার এর কাছে বিক্রি করতে গেলে দশরত চন্দ্র (৪৩), অঞ্জনা রানী (৩৮), দীনেশ চন্দ্র (৩৮), লক্ষ্মী রানী (৩৫), মুক্তা রানীসহ কয়েকজন দাবি করে যে, এই সকল তামাকের মালিক তারা। তখন ক্ষিতীশ মাষ্টার সমস্যা সমাধানের জন্য তামাক নিয়ে তার বাসায় রেখে দেয় এবং বলে পরে ভেবেচিন্তে, প্রমাণ সাপেক্ষে যার তামাক তাকে দেয়া হবে।
ঘটনার শেষ এখানেই হতে পারতো কিন্তু একইদিন সকাল ৭ ঘটিকায় অত্র এলাকার ( ভেলাবাড়ি ইউপি’র ৭,৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত) মহিলা ইউপি সদস্য সহিদা বেগমের স্বামী বাবলু মিয়া (৪৮) ও ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মোফা অতি উৎসাহী হয়ে ক্ষীতিশ মাষ্টারের বাসা থেকে রক্ষিত তামাক না জানিয়ে নিয়ে আসেন। এবং বিচারের নাম করে অতি উৎসাহী হয়ে তড়িঘড়ি করে বাদশা মিয়াকে চোর আখ্যা দেন বাবলু মিয়া। এসময় উক্ত তামাক দশরত চন্দ্রকে দিয়ে দেন। অসহায় ভুক্তভোগী বাদশা মিয়া চোখ জল মুছতে মুছতে বাসায় ঢোকেন। উল্লেখ্য, মহিলা ইউপি সদস্য সাহিদা বেগমের স্বামী বাবলু মিয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন বাদশা মিয়াকে।
এত তারাতাড়ি বিচার কেনো হলো জানতে চাইলে ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মোফা বলেন, আমি ইউনিয়ন কাউন্সিলে বসার জন্য বলেছিলাম কিন্তু বাবলু না মেনে এই বিচারের রায় দেয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাদশা মিয়া এবার অনেক জমিতে তামাক চাষ করেছে। তার পুরো বাড়িতে তামাকে ভর্তি। স্হানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাদশা মিয়া খুব ভালো মানুষ। তিনি নিজের জমি এবং আশেপাশে লোকজনের জমি বর্গা নিয়ে ফসল চাষ কর, দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকায় বসবাস করে আসছেন। স্থানীয় কয়েকজন জানায়, যার নিজের বাড়িতেই এত তামাক সে কিভাবে অন্যের বাড়ি থেকে ১০-১৫ কেজি তামাক চুরি করবে। মহিলা ইউপি সদস্যর স্বামী বাবলু মিয়া ও ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মোফা যে কাজটি করেছেন সেটি অন্যায়।
ভুক্তভোগী বাদশা মিয়ার ছেলে জানায়, আমার বাবা খেটে খাওয়া মানুষ। উনি নিজেই প্রচুর তামাকের আবাদ করেছেন। আমার বাবা এই মিথ্যে অপবাদ সইতে না পেরে গতকাল গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে আমি বাবাকে দেখতে পেয়ে সেখান থেকে ছিনিয়ে আনি। বাবুল মিয়া ও মোফাজ্জল হোসেন মোফার এই আচরণে এলাকাবাসী ক্ষীপ্ত। এরপর আমার বাবা যদি কোন অসংগতি ঘটায় এর দায়ভার নেবে কে? ভুক্তভোগীর ছেলে আরো জানায়- মাত্র ১৫ কেজি তামাক নিয়ে যারা আমার বাবাকে অপমান, অপদস্ত করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য শহীদা বেগমের সঙ্গে ফোনে কথা বলা হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমার স্বামীকে বিচার করার অধিকার দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তিনি স্বামীর পক্ষে আরও বলেন, আমি মহিলা মেম্বার, আমার স্বামী যে কোন বিচার করতে পারে।
এবিষয়ে ভেলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীর সাথে সাংবাদিকদের কথা হলে তিনি বলেন, মহিলা সদস্যের স্বামী কোনো বিচার করার এখতিয়ার রাখেনা। বিষয়টি আমি দেখবো, তবে ক,দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ চেয়ারম্যান গ্রহন না করায় জনমনে নানাবিধ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।