অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে প্রশাসনের অভিযান, ১২ গাড়ি জব্দ ও জরিমানা

প্রতিবছরের মতো এবারও গাইবান্ধার সাত উপজেলায় রেললাইন, নদী, শহর রক্ষা বাঁধ থেকে অবৈধভাবে মাটি তুলে বিক্রি করছিল বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী মহল। আর এই অপরাধে এ পর্যন্ত ১২টি অবৈধ ট্রাক্টর (কাঁকড়া) জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
শনিবার (২৩ মার্চ) বিকেল ৩টা। ইউএনও’র কাছে খবর আসে সদর উপজেলার ২ নং মালিবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বড়ুয়া টারি গ্রামের মানস নদী থেকে মাটি তুলে বিক্রি করছেন ওই গ্রামের মৃত খুজিয়া মিয়ার ছেলে ঝড়ু ও গউড়। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, ‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দিন-রাত নদীর কোল ঘেষা আবাদি জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন তারা। নিষেধ করলে তারা সবকিছু ম্যানেজ করে মাটি কাটার কথা বলেন’।
অভিযোগ পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে ঘটনা স্থলে এসে স্থানীয় আনসার পুলিশের মাধ্যমে মাইকিং করে শতাধিক গ্রামবাসী ও মাটি কাটার লেবারদের প্রথমে তিনি মাটি কাটা আইন ও এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতি সম্পর্কে অবগত করেন। এসময় ট্রাক্টর ড্রাইভার এবং জমির মালিক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও মাটি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত তিনটি অবৈধ ট্রাক্টর জব্দ করেন। রাতে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ট্রাক্টর মালিকদের এক লক্ষ্য টাকা জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলেও সতর্ক করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান।
২৭ মার্চ বুধবার রাত ১টা। রমজানে সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত শরীর যখন বিছানায়, ঠিক তখন (রাত সাড়ে ১২টা) খবর আসে, শহরের ঘাঘট নদীর তীর থেকে সারারাত স্কেভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে মাটি কেটে শতশত ট্রাক্টর মাটি অন্যত্র নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে কতিপয় ব্যক্তি। সেখানে অভিযান চালিয়ে ৪টি ট্রাক্টর জব্দ করেন। এসময় স্কেভেটর ও ট্রাক্টরের চালক ও লেবাররা পালিয়ে যায়। এই অভিযান চলাকালেই খবর আসে পাশেই খোলাহাটি ইউনিয়নের চকমামরোজপুর রেললাইনের ধারের মাটি কাটা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানেও অভিযান চালিয়ে ১টি ট্রাক্টর জব্দ করেন।
তখন রাত ২টা। খোলাহাটির চকমামরোজ গ্রাম থেকে ছুটে যাবেন ৩০ মিনিটের পথ উপজেলার সেই শেষ সীমানা, কামারজানি ইউনিয়নের কামারজানি ঘাটের বাঁধ এলাকা। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহল ড্রেজার দিয়ে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলনসহ বাঁধের মাটি কেটে প্রতিদিন রাতে শতশত ড্রাম ট্রাক মাটি ভরে বিক্রি করে আসছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে শুধু রানা নামে একজনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা হয়। এতে কয়েকদিন বন্ধ থাকে বালু উত্তোলন ও পরিবহন। তারপর আবারও শুরু হয় মাটি ও বালু উত্তোলনের মহা উৎসব। সেই খবর পেয়ে রাতেই কামারজানি বাজারে অভিযান চালিয়ে দুটি ড্রাম ট্রাক ও দুটি ট্রাক্টর জব্দ করা হয়। এ নিয়ে গত ৫ দিনের অভিযানে ১২টি ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ আল হাসান বলেন, ‘ ঘাঘট নদীর তীর ও কামারজানি এলাকা থেকে মোট ৭টি ট্রাক্টর ও ২টি ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।