গাইবান্ধায় পানিবন্দী ২৯ হাজার পরিবার

টানা বৃষ্টিপাত এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসাথে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বন্যা কবলিত এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকট।
শনিবার (৬ জুলাই) বিকাল ২ টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে ঘাঘট নদীর পানি ১৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে নতুন ব্রিজ এলাকায় বিপৎসীমার ৩৮ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী জেলার চার উপজেলায় ২৭ টি ইউনিয়নে পানিবন্দী ২৮ হাজার ৯২৮ পরিবার। তাদের মাঝে বিতরণের জন্য ৪০০ মেট্টিক টন (জিআর) চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা মজুত রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫০টি শুকনো খাবারের প্যাকেট ও ১৬৫ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৮১টি স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বিপৎসীমার উপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বাজার, রাস্তাঘাট, স্কুল, ফসলের ক্ষেত। এসব এলাকার পানিবন্দী মানুষ নদী ভাঙ্গনের পাশাপাশি তাদের গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন। ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন শতশত পরিবার।
সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রায় ২৪’শ পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। বাজার, স্কুল সব পানিতে ডুবে গেছে। এ পর্যন্ত শতাধিক ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ইউএনও মহোদয় পরিদর্শন করেছেন। ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।’
পাহাড়ি ঢলে তিস্তাবেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, কাপাসিয়া, হরিপুর ও বেলকা এই চার ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। সেইসাথে নদীর তীব্র স্রোতে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
এদিকে সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ উল্যা এলাকায় একটি কাঠের সেতু ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, খামার পবনতাইড়, হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বেড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, পাতিলবাড়ী, গুয়াবাডী, কালুরপাড়া, কানাইপাড়া, কুমারপাড়া এবং জুমারবাড়ী ইউনিয়নের কাঠুর, থৈকরের পাড়াসহ প্রায় ১৫টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ জমির পাট, কাউন, তিল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যা কবলিতরা।
সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, ‘আমার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং খাবারের প্রয়োজন। এছাড়া গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে’।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজনের ঢলে গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত রয়েছে।’
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে শুকনো খাবার, জি আর চাল (প্রাকৃতিক দুর্যোগ), নগদ অর্থ মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পীড বোট প্রস্তুত রয়েছে। ইউনিয়ন ভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি সংক্রান্ত কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে একটি হটলাইন নাম্বার দেওয়া রয়েছে, যার মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা যে কেউ, যে কোন প্রয়োজনে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবেন।’