সিরাজগঞ্জ (পাউবো)’র নদী-খনন প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়নের বোর্ডের ৬৫০ কোটি টাকার নদী-খনন প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে পাঁচিল গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ।
আজ শনিবার ৬ জুলাই সকাল ১১ টার দিকে শাহজাদপুর হাটপাচিল এলাকা থেকে ব্রাহ্মণ গ্রামের নদীপাড়ের গৃহহীন অসহায় জনগোষ্ঠীরা এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন।
মানববন্ধনটি অত্র এলাকার সমাজসেবক মোঃ রজব আলীর আহবানে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নুরুজ্জামাল, ইয়াসিন সরকার, হাজী আয়নাল হক।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিরাজগঞ্জ এনায়েতপুর শাহজাদপুর এলাকাটি এখন বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে উঠে যেতে বসেছে, শুধুমাত্র সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ৬৫০ কোটি টাকা নদী খননের জন্য প্রকল্পের বরাদ্দ দিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নানা অনিয়ম করে বেড়াচ্ছে। তারা শুকনো মৌসুমে কোন কাজ না করে বর্ষার মৌসুমী নদী ভাঙ্গনের সময় নাম মাত্র জিও ব্যাগ ফেলে টাকাগুলো নদীর জলে ফেলে দিচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা অনিয়ম আর বরদাস্ত করা হবে না। যারা নদী ভাঙ্গনের কবলে পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অবিলম্বে তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে নামা হবে।
এ সময় সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য চয়েন ইসলাম নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত তবল থেকে দুই লক্ষ টাকা দেওয়া ঘোষণা দিচ্ছি। যাদের ঘর-বাড়ি বিলীন হয়েছে, তাদের যেনো তাদের কিছু কিছু করে দেওয়া যায়। এবং ডানতীর রক্ষার কাজ যেনো দ্রুতগতিতে করা যায়, সে বিষয় নিয়ে যেখানে যেখানে কথা বলতে হয় আমি বলবো ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য কথা চলছে।
উল্লেখ্য যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে। এসকল এলাকার রাস্তা-ঘাট, হাটবাজার, বসতভিটায় পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন অর্ধলক্ষ মানুষ। ইতিমধ্যেই জেলার প্রায় ৪০৮ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪৯ মিটার। গত ৬ ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুরের পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৩৯ মিটার। যা বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদরে ১৬০ হেক্টর, কাজীপুরে ২৩০ হেক্টর, শাহজাদপুরে ১০ হেক্টর, রায়গঞ্জে ৭ হেক্টর ও কামারখন্দ উপজেলার ১ হেক্টর ফসলি জমি এরই মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব জমিতে সবজি, মরিচ, পাট, আউশ ধান, তিল ও বীজতলা ছিল।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাত দিয়ে জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে আরও বেশ কয়েকদিন, এতে জেলায় মাঝারি ধরনের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি রয়েছে জেলা প্রশাসনের।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, সর্বশেষ জেলার ৫টি উপজেলার ১ হাজার ২৭৬টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে। ৫০০ মেট্রিক টন চাল আর ১০ লাখ টাকা মজুদ আছে। সময়মতো সেগুলো বিতরণ করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দ্রুতগতিতে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্ট ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। পানি আরও ৩/৪ দিন বাড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, পানি বাড়লেও বড় ধরনের বন্যা না হলেও মাঝারি বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোর খোঁজ নিয়ে বালি ভর্তি ব্যাগ জিওটিউব ও জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।