পাকিস্তানে পাত্তাই পেলেন না সৌম্য-নাঈম-হৃদয়রা

সৌম্য, নাঈম শেখ, হৃদয়, মোসাদ্দেক, শেখ মেহেদির মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের নিয়েও বাংলাদেশ ‘এ’ দল বাজেভাবে হেরে গেল তরুণ পাকিস্তান ‘এ’ দলের কাছে।
একাদশের ৯ জনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটার আছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অনেক অভিজ্ঞ নাম আছে। অভিজ্ঞতায় দারুণ সমৃদ্ধ সেই বাংলাদেশ ‘এ’ দল লড়াই করতেই পারল না তুলনামূলক তরুণ ও অনভিজ্ঞ পাকিস্তান শাহিনসের (‘এ’ দল) সঙ্গে। ব্যাটে-বলে বাজে পারফরম্যান্সে সিরিজ শুরু করল তাওহিদ হৃদয়ের নেতৃত্বাধীন দল।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম একদিনের ম্যাচে পাকিস্তান শাহিনসের কাছে ৮ উইকেটে উড়ে গেল বাংলাদেশ ‘এ’ দল।
ইসলামাবাদে সোমবার বাংলাদেশের দলটি মাত্র ৩৬ ওভারেই গুটিয়ে যায় ১৮৩ রানে। দ্রুততায় ফিফটি করা সাইফ হাসান থামেন ৫৮ রানে। প্রথম আট ব্যাটসম্যানের আর কেউ ১৫ রানও ছুঁতে পারেননি।
পাকিস্তানের পেসার আব্বাস আফ্রিদি ৩৮ রানে শিকার করেন ৫ উইকেট। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন ২৩ বছর বয়সী পেসার। তবে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং তার এটিই।
রান তাড়ায় কোনো বেগই পেতে হয়নি পাকিস্তানিদের। ওপেনিংয়ে ৮১ বল খেলে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন হাসিবউল্লাহ খান। ৬০ বলে ৮৭ রান করেন উসমান খান। ম্যাচ শেষ করে দেন তারা ২৭.৫ ওভারেই।
পাকিস্তানের একাদশে আন্তর্জাতিক ক্রিকটের স্বাদ পাওয়া ক্রিকেটার আছেন পাঁচজন। তবে কেমন অভিজ্ঞ নন কেই। আব্বাস আফ্রিদি ও উসমান খান খেলেছেন ১০টি করে টি-টোয়েন্টি, অধিনায়ক মোহাম্মদ হারিস খেলেছেন ৬ ওয়ানডে ৯ টি-টোয়েন্টি, ওমাইর বিন ইউসুফ ও ইরফান খান খেলেছেন ৩টি করে টি-টোয়েন্টিতে।
ইসলামাবাদ ক্রিকেট ক্লাব ওভালের উইকেটে ঘাসের ছোঁয়া ছিল কিছুটা। তবে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব বিপজ্জনক কিছু নয়। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছেন আলগা ব্যাটিংয়ে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ‘এ’ দল দুই ওপেনারকে হারায় ৩০ রানের মধ্যে। দুটিই আফ্রিদির শিকার। বাইরের বল চেনা ভঙ্গিতে স্টাম্পে টেনে আনেন সৌম্য সরকার (১৯ বলে ৯), অনেক বাইরের বলে জায়গা দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন মোহাম্মদ নাঈম শেখ (১৪ বলে ৬)।
তৃতীয় উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়েন সাইফ হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। জুটিতে রান বাড়ানোর কাজটি মূলত সাইফই করেছেন।
জুটি ভাঙে হৃদয়ের (১৪ বলে ১৩) বিদায়ে। বাঁহাতি স্পিনার মেহরান মুমতাজের ঝুলিয়ে দেওয়া বাইরের বলে স্লগ করতে গিয়ে বল স্রেফ ওপরে তুলে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। স্লিপেই ক্যাচ নেন ইরফান খান।
এরপর বড় কোনো জুটি আর গড়ে ওঠেনি। জাহান্দাদ খানের বাঁহাতি পেসে খোঁচা মেরে কিপারকে ক্যাচ দেন জাকের আলি (৬ বলে ৫)। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই মেহরানকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মেরে কাভারে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেক হোসেন (২ বলে ১)।
আফ্রিদি পরের স্পেলে ফিরে ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের ভরসা হয়ে থাকা সাইফকে। শর্ট বল পুল করে স্কয়ার লেগ সীমানায় ধরা পড়েন ২৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। তার ৪৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে চার ১০টি, ছক্কা ১টি।
আফ্রিদিরই বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন তানজিম হাসান সাকিব।
১১৬ রানে ৭ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা উদ্ধার করেন রিশাদ হোসেন। ৯ নম্বরে নেমে চারটি চার ও দুই ছক্কায় ৩৮ বলে ৪০ রান করেন তিনি। শেখ মেহেদি হাসানের সঙ্গে জুটিতে আসে ৪৪ রান। জাহান্দাদকে স্লগ করার চেষ্টায় থামে রিশাদের ইনিংস।
অনেকটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখা শেখ মেহেদিকে (৩৪ বলে ১২) ফিরিয়ে আফ্রিদি পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
শেষ জুটিতে দুই পেসার রেজাউর রহমান রাজা ও রুয়েল মিয়া কিছুটা লড়াই করে ২১ রান যোগ করে দলকে ১৮০ পার করান।
মুবাসির খানের অফ স্পিন উড়িয়ে মারতে গিয়ে রুয়েল বোল্ড হলে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৪ ওভার আগেই।
এই পুঁজি নিয়ে লড়াই করতেও পারেনি বাংলাদেশ। নতুন বলে আব্দুল ফাসিহকে দ্রুত ফেরান শেখ মেহেদি। তবে দ্বিতীয় উইকেটে হাসিবউল্লাহ ও উসমান কার্যত শেষ করে দেন ম্যাচ। ১২৯ রানের জুটি গড়েন দুজন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে খেলার চেষ্টা করে পরে পাকিস্তানের ক্রিকেটে ফেরা উসমান সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় করেন ৭৫ বলে ৮৭।
এলবিডব্লিউ করে তাকে থামান মোসাদ্দেক। ওমাইর বিন ইউসুফকে নিয়ে বাকি পথ অনায়াসেই পাড়ি দেন হাসিবউল্লাহ।
বাংলাদেশের কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারেননি সেভাবে। দুই পেসার রেজাউর ও রুয়েলের ওপর দিয়ে ধকল যায় বেশি। সুবিধা করতে পারেননি লেগ স্পিনার রিশাদও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ‘এ’: ৩৬ ওভারে ১৮৩ (নাঈম ৬, সৌম্য ৯, সাইফ ৫৮, হৃদয় ১৩, জাকের ৫, মোসাদ্দেক ১, শেখ মেহেদি ১২, তানজিম ১, রিশাদ ৪০, রেজাউর ১০, রুয়েল ১২*; ইমরান জুনিয়র ৭-১-৪২-০, আফ্রিদি ৯-০-৩৮-৫, জাহান্দাদ ৮-০-৫১-২, মেহরান ৮-০-২৯-২, মুবাসির ৪-১-১৮-১)।
পাকিস্তান শাহিনস: ২৭.৫ ওভারে ১৮৪/২ (হাসিবউল্লাহ ৭৩, ফাসিহ ১, উসমান ৮৭*, ওমাইর ১৪*; রুয়েল ৩.৫-০-৩৩-০, তানজিম ৫-০-২৪-০, শেখ মেহেদি ৫-০-১৯-১, রিশাদ ৩-০-৩৫-০, রেজাউর ৩-০-৩৭-০, সাইফ ২-০-১০-০, সৌম্য ৩-০-১৭-০, মোসাদ্দেক ৩-০-১৫-১)।
ফল: পাকিস্তান শাহিনস ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: আব্বাস আফ্রিদি।