হিমায়িত চিংড়ি শিল্পে ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি

করোনা পরিস্থিতি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে দেশের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু দেশে কার্ফুসহ পরবর্তী নানা কারণে আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। কার্ফুর সময় পরিবহন না চলায় চিংড়ি সময়মতো শিপমেন্ট বা জাহাজীকরণ করা যায়নি। আর ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে বন্ধ ছিল যোগাযোগ। এ সময় ব্যাংক বন্ধ থাকায় হয়নি লেনদেন।
এতে ক্ষতি প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ফলে সময়মতো চিংড়ি রপ্তানি করতে না পারায় এই শিল্পে আবার নতুন করে জেঁকে বসেছে অনিশ্চয়তা। বর্তমান পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে এরই মধ্যে বিদেশী অনেক ক্রেতা অন্য দেশ থেকে চিংড়ি রপ্তানি করছেন। পূর্বে সময়মতো পণ্য দিতে না পারায় নতুনভাবে চুক্তি করতে ভয় পাচ্ছেন তারা। ফলে এই খাতে সুদূর প্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ব্যবসায়ীরা জানালেন ক্ষতিকাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা।
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমের জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় সাদা সোনাখ্যাত জিআই পণ্য চিংড়ি।
যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। যেখান থেকে আয় হয় হাজার হাজার কোটি টাকা। সে কারণেই এই খাতকে বলা হয় বিদেশী মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের হিসেব মতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে চিংড়ি রপ্তানি হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন। যা থেকে দেশে টাকা এসেছে এক হাজার ৭৪৪ কোটি। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১৯ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন। আয় ছিল দুই হাজার ৪১২ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ২৪ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন। অর্থ এসেছিল দুই হাজার ৬১১ কোটি।
জানা যায়, চলমান পরিস্থিতিতে আবার সংকটে পড়েছে আমদানিকারকরা। কর্ফু ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন কারণে পরিবহন বন্ধ থাকায় সময়মতো শিপমেন্ট করা যায়নি চিংড়ি। এ ছাড়া ডিপো থেকে কোম্পানিতে চিংড়ি সরবরাহ না হওয়ায় চাহিদামতো চিংড়ি পাওয়া যায়নি। এ সময় বন্ধ ছিল অনেক কোম্পানি। আর ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে একদিকে বিদেশীরা পুরাতন অর্ডার বাতিল করেছে, অপরদিকে নতুন অর্ডার করতেও তারা অনীহা প্রকাশ করছে।
এতে ফ্যাক্টরিতেই পড়ে থাকে টনকে টন রপ্তানি যোগ্য চিংড়ি। এ ছাড়া ওই সময় ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকার কারণে লেনদেন না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ীরা। খুলনা সালাম সী ফুডস্ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ বদরুজ্জামান বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে ওই সময়ে বিদেশী বায়াররা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। আর পরিবহন না চলায় তাদের পূর্বের অর্ডার মতো মাল পাঠাতে পারিনি। এর ফলে তারা আমাদের এখন অবিশ্বাস করছে। নতুন অর্ডার দিতে ভয় পাচ্ছে।
এটলাস সী ফুডস্ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জিএম খায়রুল আলম জানান, আমরা যখন পণ্য পাঠাতে পারিনি তখন থেকে পণ্য পড়ে আছে। একই সময় ডিপো থেকে চিংড়ি ঠিকমতো আসেনি। তবে এরই মধ্যে নতুনভাবে অনেক ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। কেউ কেউ নতুনভাবে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। কিছু পণ্যও আমরা পঠাতে সক্ষম হয়েছি।
আছিয়া সী ফুডস্রে ডিজিএম শেখ মো. মুরাদ বলেন, আমরা যারা এই ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত তারা অনেকেই ব্যংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল। সেজন্য একদিকে পণ্য পড়ে আছে অপরদিকে ব্যাংকে সুদের পরিমাণ বাড়ছে। এ ছাড়া কার্ফুও কারণে ফ্যাক্টরি যখন বন্ধ চিল তখন কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঠিকই বেতন দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন করে ধ্বাক্কা খেলাম আমরা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন জানান, সম্প্রতি পরিস্থিতে পূর্বের অর্ডরের পণ্য না দেওয়ায় ৩০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। কিছুটা হলেও বিদেশীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনিতেই আমাদের দেশে ভেনমী চিংড়ির চাষ কম হওয়া আমাদের পণ্যের উৎপাদন মূল্য বেশি থাকে। সব মিলিয়ে এই সুযোগে তারা আরও বেশি অন্য দেশের ওপর ভরসা করছে। এটা কাটিয়ে উঠতে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।