নোয়াখালীর এমপি একরাম গ্রেফতার

চট্টগ্রামের খুলশি থেকে গ্রেফতার হয়েছেন নোয়াখালী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রামের খুলশি থানাধীন আবদুল মালেক লেন এলাকার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র্যাবের একটি দল।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) শরীফ উল আলম প্রথম আলোকে বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে খবর পেয়ে নগরের খুলশী এলাকার বাসা থেকে সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ২৬ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার, ২ হাজার ১০০ সিঙ্গাপুরের মুদ্রা ও বাংলাদেশি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তার কাছ থেকে দেশী-বিদেশী বেশ কিছু মুদ্রাসহ কিছু ব্যক্তিগত মালামাল জব্দ করেছে র্যাব।
আটকের সময় জব্দকৃত ব্যক্তিগত মালামাল:
১/ বাংলাদেশী ১০০০ টাকার নোট ১০০ টি ১০০০×১০০ =১০০,০০০/ (১ লক্ষ) টাকা মাত্র টাকা ২/ বাংলাদেশী ৫০০ টাকার নোট ১৮ বান্ডেল প্রতি বান্ডেলে ৫০,০০০ হাজার টাকা করিয়া ৫০০০০×১৮= ৯০০০০০/ (নয় লক্ষ) টাকা মাত্র। সর্বমোট বাংলাদেশী টাকা ১০,০০০০/ (দশ লক্ষ) টাকা মাত্র ৩/ ইউএস ডলার ১৬২টি প্রতিটি ১০০ ডলার করিয়া ১৬২×১০০= ১৬২০০/ ডলার ৪/ সিংগাপুরী ডলার ৬টি নোট ১০০ ডলার, ২৯টি নোট ৫০ ডলার, ৫টি ১০ ডলার, ৪টি ৫ ডলার, ৪টি ২ ডলার,নসর্বমোট ২১২৪ সিংগাপুরী ডলার। ৫/ এটিএম কার্ড ৪টি, ৬/ এনআইডি কার্ড ১টি
৭/ মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স ১টি, ৮/ সংসদ ভবন আইডি কার্ড ১টি, ৯/ মানি ব্যাগ ১টি, ১০/ সোনার সাদৃশ্য চেইন ১টি।
একরামুল করিম চৌধুরীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে র্যাব কর্মকর্তা শরীফ জানিয়েছেন।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন একরামুল করিম চৌধুরী। গত ১৭ বছর ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিছু দিন আগেও তার কথার বাইরে এলাকায় কিছুই হতো না। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে শ্রমিক দলের কর্মী মো. খোকনকে (২৫) গুলি করে হত্যার অভিযোগে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী নিহত খোকনের বাবা মফিজুল হক। আসামিরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। ওই মামলায় গ্রেফতারর দেখানো হবে একরামুলকে। একরামুল ছাড়াও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে ৫৩ জনকে।
একরামুল করিম ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে ওবায়দুল কাদের ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিপক্ষে নির্বাচন করেন। ভোট পান ৩৪ হাজার। তখনই আলোচনায় আসেন তিনি। তবে ক্ষমতা পোক্ত করেন ২০০৮ সালে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নোয়াখালী-৪ আসনে সেবার এমপি হন তিনি। এর পর এই আসনে আরও তিনবার এমপি হন।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত মে মাসে ছেলে শাবাব চৌধুরীকে তিনি সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী করেন। ভোটে জয়ী হন শাবাব। এ ছাড়া, গত ১৫ বছর কবিরহাট পৌরসভার মেয়র ছিলেন তাঁর ভাগনে জহিরুল হক রায়হান। স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলী নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন তারা কেউই এলাকায় নেই।
অভিযোগ রয়েছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, এলজিইডি ও পিডব্লিউডির টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে একরামুল করিমের ছিল নিজস্ব বাহিনী। এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তাঁর ভাগনে রায়হান, চাচাতো ভাই নূরুল আমিন রুমি, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহমুদুর রহমান জাবেদ। এই বাহিনী নোয়াখালীর ফোর লেন প্রকল্প ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার উন্নয়ন কাজে চাঁদা নেয়। এলাকায় চলাচলকারী চার হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে তারা চাঁদা তোলে। সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, জিয়াউল হক লিটন, আব্দুল মমিন বিএসসি, সহসভাপতি আতাউর রহমান মানিক ও মাহমুদুর রহমান জাবেদ ওরফে মামা জাবেদ। তারা সবাই এখন আত্মগোপনে।
এমপি হওয়ার পর একরামুলের সম্পদ বেড়েছে রকেট গতিতে।’ নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ২০০৮ সালে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার। ২০১৪ সালে ওই সম্পদ বেড়ে হয় ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার। ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৩৪ কোটি ৬২ লাখ টাকার। আর ২০২৩ সালে জমা দেওয়া সর্বশেষ হলফনামা অনুযায়ী, একরামুল করিমের মোট সম্পদ ৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার, যার মধ্যে স্থাবর ৭ কোটি ৪৩ লাখ ও অস্থাবর ২৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার।