১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব, আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় জামায়াত

গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বক্তব্য দেন
আইন, বিচার, সংসদ, নির্বাচনব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রের সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ১০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে জামায়াতে ইসলামী। আজ বুধবার দুপুরে গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এ প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, মূলত তাঁদের সংস্কার প্রস্তাব ৪১ দফা, সেটা বিস্তারিত। এখন তাঁরা সংক্ষেপে ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য যেগুলো প্রাধান্য দেওয়া দরকার, সেগুলো দিয়েছেন। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে বাকিগুলো দেখবে।
এ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সব কটি করে দিলে নির্বাচিত সরকার এসে কী করবে। আমরা নির্বাচিত সরকারকেও পরীক্ষা করতে চাই। যখন আমরা বিরোধী দলে থাকি, আমাদের কণ্ঠ-আওয়াজ হয় এক রকমের, আর সরকারে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরে যাই। তাই আমিসহ আমাদের সবাইকে পরীক্ষা করতে চাই। আমরা আগের জায়গাতেই আছি, নাকি এত বড় একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদেরও মানসিকতার কিছু পরিবর্তন হয়েছে, সেটা আমরা একটু দেখতে চাই।’
শফিকুর রহমান বলেন, দেড় সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মৌলিক সংস্কার সম্পন্ন করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার জন্য নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ব্যতীত নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান প্রধান সেক্টরের সংস্কারের জন্য ১০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন নায়েব আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের।
জামায়াতের প্রস্তাব, আইন ও বিচার
উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে, বিচার বিভাগ থেকে দ্বৈত শাসন দূর করতে হবে, বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক্করণের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে বিদ্যমান আইনগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও গণমানুষের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ ও সব কালো আইন বাতিল করতে হবে, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নিম্ন আদালতের যথাযথ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য পৃথক বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে, সব ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, দেওয়ানি মামলার জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং ফৌজদারি মামলাগুলো সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান করতে হবে।
সংসদবিষয়ক সংস্কার
সংসদের প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার মনোনীত করতে হবে, সংসদীয় বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে ছায়া মন্ত্রিসভা গঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা (পিআর) চালু করতে হবে, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে, নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে, কোনো সরকারি চাকরিজীবী তাঁদের চাকরি ছাড়ার কমপক্ষে তিন বছরের মধ্যে কোনো ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে, নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন একাধিক দিনে অনুষ্ঠিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের অধীন আনতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংস্কার
পুলিশ বাহিনীর সংস্কার: ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত পুলিশ আইন পরিবর্তন এবং পুলিশের জন্য একটি পলিসি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে, পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তির সুপারিশের সুযোগ রাখা যাবে না তথা সর্বপ্রকার দলীয় ও ব্যক্তিগত প্রভাব বা হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, পুলিশ ট্রেনিং ম্যানুয়ালের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক অনুশাসন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, পুলিশের মধ্যে মারণাস্ত্রের ব্যবহার বাতিল করতে হবে, রিমান্ড চলাকালে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আসামিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি এবং মহিলা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের অভিভাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, বিচার বিভাগীয় সদস্যদের দ্বারা পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান থাকতে হবে, পুলিশের ডিউটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা উন্নত করতে হবে, ‘পুলিশ আইন’ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করতে হবে।
র্যাববিষয়ক সংস্কার
আইনশৃঙ্খলা সংস্কার
পুলিশ বাহিনীর সংস্কার: ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার প্রণীত পুলিশ আইন পরিবর্তন এবং পুলিশের জন্য একটি পলিসি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে, পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি এবং চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তির সুপারিশের সুযোগ রাখা যাবে না তথা সর্বপ্রকার দলীয় ও ব্যক্তিগত প্রভাব বা হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, পুলিশ ট্রেনিং ম্যানুয়ালের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিক অনুশাসন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, পুলিশের মধ্যে মারণাস্ত্রের ব্যবহার বাতিল করতে হবে, রিমান্ড চলাকালে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে আসামিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি এবং মহিলা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদের অভিভাবকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে, বিচার বিভাগীয় সদস্যদের দ্বারা পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান থাকতে হবে, পুলিশের ডিউটি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা উন্নত করতে হবে, ‘পুলিশ আইন’ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করতে হবে।
র্যাববিষয়ক সংস্কার করতে হবে। চাকরিতে বিরাজমান আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারি চাকরিতে যাঁরা প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও দলীয় বিবেচনায় চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
প্রথম আলো