গোবিন্দগঞ্জে দুই শিক্ষকের দুর্নীতি ও অনিয়মে ডুবতে বসেছে বিদ্যালয়

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দুই শিক্ষকের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে কোচাশহর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কারের যৌক্তিক দাবী জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ জুন মাসে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। আবার অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ফি বাবদ গত জুলাই মাসে বিদ্যালয়ের ৯০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হলেও পরবর্তীতে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এদিকে গত ২ অক্টোবর সকালে বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস নোটিশের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ অতিরিক্ত ৯০ টাকা জমা দিতে বলা হয়। তখন বিষয়টি নিয়ে ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঝে চাপা উত্তেজনা দেখা দিলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করলেও আবার রবিবার শিক্ষার্থীদের ফি’র অতিরিক্ত টাকা জমা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। বাড়তি টাকা না দিলে তাদের রেজিষ্ট্রেশন করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। বাধ্য হয়ে গত ৬ অক্টোবর দুপুরে শিক্ষার্থীরা মিলে ক্লাস বর্জন করে শ্রেণী কক্ষ থেকে আনা বেঞ্চ সড়কে রেখে সেখানে বসে পড়ে। এসময় তারা প্রধান শিক্ষক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের দুর্নীতির ও অনিয়মের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী সামছুজ্জামান সুইট জানান, ৮ম শ্রেণীতে মোট ১৯০ জন শিক্ষার্থী। তবে গত জুলাই মাসে ১৬০-১৬৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ মোট ৫২৬২০ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে বোর্ড ফি ৯০ টাকা, অনলাইন ফি ৫০ টাকা, সাব ফি ১৮০ ও উন্নয়ন ফি ২৩০ টাকা রয়েছে। সবাই এখনো টাকা জমা দেইনি।
শিক্ষার্থীদের উপর ধার্যকৃত বাড়তি টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে সমন্বয় করার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমি ৫ মাস হচ্ছে দায়িত্ব নিয়েছি। বিদ্যালয়ের ফান্ডের একটি ব্যাংক একাউন্টে মাত্র ৩৪ হাজার টাকার মত আছে।
প্রধান শিক্ষক আরও জানান, আমি দায়িত্ব গ্রহনের আগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইয়ুব হোসেন বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা আত্নসাৎ করেছেন। তিনি বিদ্যালয়ের পুরাতন ওয়াশ ব্লকসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ভাঙ্গার ৩২ হাজার ইট, রড, টিন, বাঁশ, কাঠ ও গাছ বিক্রি বাবদ আয় দেখিয়ে বিদ্যালয়ের ফান্ডে ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা জমা করলেও বিভিন্ন খাতে বিদ্যালয়ের ব্যয় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেখিয়ে ফান্ডের টাকা লোপাট করেন। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশনের টাকা উত্তোলন করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়েছেন। এমনকি সাংবাদিকদের কনভেন্স বিল বাবদ ২৭০০০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে ভাউচারের মাধ্যমে সেই টাকা উত্তোলন করেছেন।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইয়ুব হোসেনকে বিদ্যালয়ে না পেয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি কোন দুর্নীতি করিনি। সমস্ত টাকা বিদ্যালয়ের কাজে ব্যয় হয়েছে। বরঞ্চ প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ফি’র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা করে আদায় করেছেন। এই টাকা তিনি বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজেই আত্নসাৎ করেছেন।
পরীক্ষা কমিটির প্রধান পরেশ চন্দ্র বর্মন জানান, যষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ২০০-৩০০ টাকা করে অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ফি আদায় করে বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কমিটি নিয়েছে। শ্রেণীভেদে ২ থেকে ৪টি বিষয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পরে তা স্থগিত হয়ে যায়। এযাবৎ ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে কিংবা অবশিষ্ট রয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সঠিক হিসাব দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে সদ্য বিদেয়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া গত ২ অক্টোবর বিকালে বর্তমান প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আইয়ুব হোসেনকে তাঁর কার্যালয়ে যেতে বলেন। তারা সেখানে গিয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে পাশকৃত চেকে বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসাবে ইউএনও’র স্বাক্ষর নিয়ে বিদ্যালয় ফান্ড থেকে ৩৩ হাজার টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করলে, ইউএনও রাসেল মিয়া তাদের নিকট বিদ্যালয় ফান্ডে টাকা জমাকৃত পূর্ববর্তী ব্যাংক রিসিপ্টগুলো দেখতে চাইলে তারা ব্যাংক রিসিপ্ট দেখাতে ব্যর্থ হলে তিনি চেকে স্বাক্ষর করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এমতাবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলন করে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন করতে পারছেন না। এদিকে শিক্ষার্থীরা রেজিষ্ট্রেশন থেকে বাদ পড়ে যেতে পারে বলে চিন্তিত তাদের অভিভাবকরা। এভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম চলতে থাকলে ছাত্রছাত্রীরা অন্যত্র ভর্তি হয়ে বিদ্যালয়টি বন্ধ হতে পারে বলে আশংকা করছেন এলাকাবাসী।