পাকিস্তানের ব্যর্থতার জন্য কি বাবর আজম আর ইনজামামকে দুষছে পিসিবি?

পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজম এবং নির্বাচক ইনজামাম উল হককে স্কোয়াড গঠনের ‘পূর্ণ স্বাধীনতা ও সমর্থন’ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের বদলে এখন থেকে ওই দায়িত্ব পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড পিসিবি নিজেই পালন করবে।
বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে এমন কথা বলেছে পিসিবি।
বিবৃতিতে পিসিবি বলেছে, “বিশ্বকাপের দল গঠনের জন্য প্রধান নির্বাচক এবং অধিনায়ককে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এখন থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে।”
এখন টুর্নামেন্টের বাকিটা সময় দলের পাশে থাকার জন্য ভক্ত-সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছে পিসিবি।
তবে এখনি কোন ব্যবস্থা নেয়া কিংবা দলে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি ওই বিবৃতিতে।
এই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের অবস্থা ইংল্যান্ডের চেয়ে একটু ভালো, দুটি ম্যাচে জয় পেয়েছে বাবর আজমের দল।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় টার্গেট তাড়া করে জয় পাওয়াতে নেট রান রেটের অবস্থাও একেবারে খারাপ না।
কিন্তু পাকিস্তান আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে। এখনও নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বাকি পাকিস্তানের।
পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড দুই দলই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ হেরে একটা অনিরাপদ জায়গায় অবস্থান করছে।
বিবিসি উর্দুতে নিজের কলামে সামি চৌধুরী লিখেছেন, “বাবর আজম যে ধরনের অধিনায়কত্ব করছেন, তাতে তিনিই এই অবস্থার পেছনে দায়ী হবেন”।
ইংল্যান্ডের কী অবস্থা?
ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা আজ মুখোমুখি হচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০২৩ এর লিগ পর্বের এক ম্যাচে।
বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এখনও পর্যন্ত আট নম্বরে আছে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে এমন প্রেডিকশন খুব কম মানুষই করেছেন।
জস বাটলার টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলেছিলেন ইংল্যান্ড এখানে কোনও কিছুই ডিফেন্ড করতে আসেনি, তারা এবার হবে ‘অ্যাটাকিং চ্যাম্পিয়ন’।
এই কথাটা তিন সপ্তাহ যেতে না যেতেই ঘুরে গেল।
ইংল্যান্ড এখন কোণঠাসা, বিবর্ণ।
শ্রীলঙ্কাও যে খুব ভালো অবস্থানে রয়েছে তা নয়।
তবে ইংল্যান্ডের মইন আলী বলছেন, যদি কোনও দল এই অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তবে সেটা ইংল্যান্ডই।
কিন্তু কীভাবে?
ইংল্যান্ডের এখন পয়েন্ট চার ম্যাচে দুই, বাকি পাঁচ ম্যাচে জিতলে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট হবে ১২।
বাকি পাঁচ ম্যাচের মধ্যে ইংল্যান্ডের ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ আছে, এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ আছে, প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে চলা দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ আছে।
এর আগে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড চার বছর আগেও একটা কঠিন জায়গা থেকেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এবং শেষ পর্যন্ত ট্রফি হাতে তুলেছিল।
সেবার শেষ দুই ম্যাচে জয়ের দরকার ছিল ইংল্যান্ডের।
ইংল্যান্ডের সহ-অধিনায়ক মইন আলী বলেছেন, “আমাদের জিততে হবে”।
ম্যাচ জয় ছাড়া অন্য কোনও সমীকরণ মাথায় নেই, বিশ্বকাপে টিকে থাকতে ম্যাচ জিততেই হেব বলছেন মইন আলী।
তবে শুধু পয়েন্ট টেবিলের অবস্থানই নয়, ইংল্যান্ডের ভাবনার আরও বিষয় রয়েছে।
যেমন রিস টপ্লির ইনজুরি, এই ইন-ফর্ম বাহাতি ফাস্ট বোলারের আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর আর মইন আলী একাদশে সুযোগ পাননি।
তবে এবার তিনি খেলবেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২৯ রানের হারেই মূলত ইংল্যান্ড সবচেয়ে বড় ধাক্কার শিকার হয়েছে।
সেই ম্যাচে দলটি ছয়জন মূল ব্যাটার এবং ডেভিড উইলিকে সাত নম্বরে খেলিয়েছে।
মইন আলী বলছেন, “হ্যাঁ, আমরা কিছু জিনিস নিয়ে কাজ করেছি। যা আসলে শেষ পর্যন্ত কাজে দেয়নি। আমরা যদি এখন সব গুছিয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা শুরু করি তাতে অবাক হওয়ার কিছু দেখি না আমি”।
ইংল্যান্ড অনেক বছর ধরেই শীর্ষ পর্যায়ে ভালো ক্রিকেট খেলে আসছে এই বিশ্বাসেই মইন আলী সামনের কঠিন পথটা পাড়ি দিতে চান।
ডেভিড ওয়ার্নার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দ্বিমত!
মাঠে আলোর খেলা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দুই ক্রিকেটারের ভিন্ন মত দেখা গেছে গতকাল।
বিশ্বকাপে আয়োজকরা মাঠে অবস্থানরত ক্রিকেট দর্শকদের জন্য বিশেষ লাইট-শো এর ব্যবস্থা করেছে।
এটাকে একটা ‘বাজে আইডিয়া’ বলছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড গড়া এই ব্যাটার বলেন, “চোখের জন্য এটা অস্বস্তিদায়ক, আবার আলোর সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। সমর্থকদের জন্য দারুণ, কিন্তু ক্রিকেটারদের জন্য ব্যাপারটা ভালো না।”
এটাকে ‘খুবই ফালতু’ একটা বিষয় বলেছেন ম্যাক্সওয়েল।
তবে ডেভিড ওয়ার্নার টুইট করে লিখেছেন, “আমি লাইট শো’টা দারুণভাবে উপভোগ করেছি। কী দারুণ পরিবেশ। এটা সবসময়ই সমর্থকদের জন্য। আপনারা ছাড়া আমরা ভালোবাসার কাজটা করতে পারতাম না।।”
ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, “এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিগ ব্যাশে এই আলোর প্রদর্শনী দেখেছি, আমার ভালোলাগেনি। প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়েছে।”
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের যত রেকর্ড
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪০ বলে শতক হাঁকিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
যা ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম শতক।
এই বিশ্বকাপেই দক্ষিণ আফ্রিকার এইডেন মারক্রাম ৪৯ বলে ১০০ রান তুলে রেকর্ড গড়েছিলেন, তিন সপ্তাহের মধ্যে রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল।
দুটি ইনিংসই হয়েছে দিল্লির মাঠে।
বিশ্বকাপে দ্রুততম শতকের তালিকায় ম্যাক্সওয়েল নিজেই আবার চার নম্বরেও আছেন, ২০১৫ সালে তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন।
ম্যাক্সওয়েলই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্রুততম শতকের মালিক, এর আগে অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেটার ম্যাগ ল্যানিং ৪৫ বলে শতক হাঁকিযেছিলেন নিউজিল্যান্ডের নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে।
ওয়ানডে ইতিহাসে ম্যাক্সওয়েলের এই ৪০ বলে শতকের তালিকায় আছে চার নম্বরে, এক নম্বরে আছেন ৩১ বলে শতক হাঁকানো এবি ডি ভিলিয়ার্স।
এছাড়া ৩৫ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন এবং ৩৭ বলে শতক হাঁকিয়ে দীর্ঘদিন রেকর্ডের মালিক ছিলেন পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল গতকাল ৩৯ ওভার ১ বলে মাঠে নামেন, ম্যাক্সওয়েলই সবচেয়ে বেশি ওভারে মাঠে নেমে শতক তুলে নেয়া ওয়ানডে ব্যাটার।
এর আগে ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ৩৮ ওভার ৪ বলে মাঠে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।